নেত্রকোনায় জেলা সমাজ সেবা অধিদফতরের অনুমোদনহীন গঠনতন্ত্রসহ দুই বছরের জন্য সমাজ কল্যাণ সমিতি পরিচালিত পরিচালনা কমিটিতে তারিখ বিহীন স্বাক্ষর করেছেন বিদায়ী ডিসি। দেশজুড়ে যখন স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে চিকিৎসাসেবার অনিয়ম বন্ধে অভিযান চলছে তখনো ডাক্তারবিহীন রিপ্রেজনটেটিভদের সহায়তায় চোখের চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে নেত্রকোনার সাতপাই চক্ষু হাসপাতালে। এতে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসার জন্য আসা গ্রামের রোগীরা। এখানে চিকিৎসা করে অন্ধত্ববরণ করছেন অনেকেই। এসকল নানা অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ পেতেই পদাধিকারবলে সভাপতি পদের স্বাক্ষরটি করেন বিদায়ী জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান। ৩১ মে গত মঙ্গলবার ছিলো জেলা প্রশাসক হিসেবে শেষ কার্যদিবস।
তবে চক্ষু হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সমাজ কল্যাণ সমিতির গঠনতন্ত্র সংশোধন ও নতুন কমিটি করার উদ্দেশ্যে সভা হয়েছে দেখিয়ে এই স্বাক্ষর করলেও গঠনতন্ত্র অনুমোদনে নেই জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালকের কোন অনুমোদন। কিন্ত এতে স্বাক্ষর করেছেন অন্যান্যের মাঝে সাবেক পরিচালনা কমিটি ও গঠনতন্ত্র সংশোধিত আহŸায়ক কমিটির আরও তিন সদস্য।
জানা গেছে, পদাধিকার বলে ডিসি সভাপতি হলেও পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণেই দীর্ঘদিন ধরে চলা প্রতিষ্ঠানটিতে নানা অনিয়ম চলে আসার খবর বেড়িয়ে পড়ে। এতে প্যারামেডিক হিসেবে সকল চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন সাধারণ সম্পাদক জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মতিয়র রহমান খানের বোন। ডাক্তারবিহীন দীর্ঘ বছর ধরে চলা এমতাবস্থায় কয়েক মাস আগেই গঠনতন্ত্র বিহীন বিলুপ্ত করা পরিচালনা পরিষদের আহŸায়ক কমিটির দ্বায়িত্ব দেয়া হয় উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তার কাছে। পরে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুনের স্বাক্ষরসহ জেলা সমাজসেবার উপ-পরিচালকের অনুমোদন নিতে হয়।
কিন্তু অনুমোদন না হলেও সকল অভিযোগ আড়াল করেই তড়িঘড়ি করে গঠনতন্ত্র সংশোধন ও আগামী দুই বছরের জন্য পরিচালনা কমিটির অনুমোদন ফাইলে তারিখ বিহীন স্বাক্ষরটি দিয়ে গেছেন তিনি। বিদায় বেলায় তরিঘড়ি করে স্বাক্ষর দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর স্থানীয় সচেতন মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্নের। তখন আরো জানা গেছে এ ছাড়াও জেলা প্রশাসক হিসেবে জরুরী অবস্থায় অসংখ্য ফাইলেই তারিখ হীন স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এ ব্যাপারে দ্বায়িত্বে থাকা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তত্ববধায়ক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ফাইল স্বাক্ষরের সময় তিনি শুধু সাথেই ছিলেন এ পর্যন্তই জানেন। বুধবার (১ জুন) নবাগত জেলা প্রশাসকের‘ যোগদানের দিনে বিদায়ী জেলা প্রশাসক এটিতে পদাধিকার বলে সভাপতি পদের স্বাক্ষরটি দিয়েছেন। এটি বিধি সম্মত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সভা করতে হয়, তারা হয়তো ফোনে যোগাযোগ করেছেন। সকলের সম্মতি ও স্বাক্ষর হলে জেলা সমাজসেবার উপ-পরিচালক কর্তৃক অনুমোদন হওয়ার পর জেলা প্রশাসকের অনুমোদন দেয়াটাই বিধি সম্মত।
অন্যদিকে স্বাক্ষর করা তিন সদস্যের এক সদস্য আওয়ামীলীগ নেতা মাজাহারুল ইসলাম জানান, আদর্শ শিশু বিদ্যালয়ে মিটিং করেছেন। এটি দেখিয়েই স্বাক্ষর করা হয়। তিনি এই কমিটিতে থাকলেও হ্সাপাতালের ব্যাপারে কিছু জানেননা বলেও জানান। তবে এখন এসকল নানা অনিয়মের খবর পাওয়ায় অতি শীঘ্রই বন্ধের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।