কখনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বড় কর্মকর্তা, কখনো এনএসআই উর্ধতন, কখনো সাংবাদিক পরিচয় প্রদান করে চলেন প্রতারক চক্রটি। তারা শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় ও নেত্রকোনা মেডিক্যাল কলেজে প্রশাসনিকসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে নেত্রকোনার বিভিন্ন এলাকার মানুষদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ৪৩ লক্ষ টাকা।
নেত্রকোনার স্থানীয় এক যুবক আবু সায়েমের মাধ্যমে চলতো লেনদেন। এরপর এক পর্যায়ে নিয়োগ প্রাপ্তদের মনে সন্দেহ হলে বাকী টাকা নিতে আসলে প্রতারকদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় মো. নাজমুল হাসান খান নামে এক ভুক্তভোগী বাদী হয়ে নেত্রকোনা মডেল থানায় তিনজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন।
গেফতারকৃত তিনজন হলেন, চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার সাতরশিয়া গ্রামের মৃত ইমদাদুল হকের ছেলে রেজাউল হক টিটু যিনি এই প্রতিনিধিকে সিএনএন অনলাইনের স্টাফ রিােপর্টারও দাবী করেছেন। এর আগে ধরা খাওয়ার সময় তিনি এন এস আইয়ের উর্ধ্বতন পরিচয় দিয়েছেন।
অপর দুজন ঢাকার গাজীপুরের শ্রীপুর থানার গলধাপাড়া গ্রামের মৃত আঃ হেকিমের ছেলে আবুল কালাম আজাদ ও নেত্রকোনা সদরের আমতলা ইউনিয়নের দুগয়া গ্রামের মৃত আঃ হাকিমের ছেলে আবু সায়েম।
তাদেরকে গ্রেফতার করে শুক্রবারই আদালতে সোর্পদ করা হয়। সেই সাথে গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে বিজ্ঞ আদালতে আবেদন করেছে মডেল থানার পুলিশ।
ভুক্তভোগীরা জানায়, শহরের কাটলি এলাকায় আলী ইমামের বাসায় ভাড়া থাকা আমতলার যুবক আবু সায়েম চাকুরির সকল বিষয়ে চক্রের অপর দুজনের সাথে লেনদেন করেন। তারা শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে প্রলোভন দেখিয়ে নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন এলাকার ৭ জনের নিকট থেকে মোট ৪৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেয়।
দীর্ঘদিন ধরে বিভিণœ কৌশলে এমনকি ভুক্তভোগীদেরকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ১০৩ নং কক্ষে নিয়ে যায়। এরপর বিশ^াসের ওপর ভিত্তি করে তারা দফায় দফায় টাকা দেন। পরবর্তীতে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে নিয়োগপত্র আসলে তাদের সন্দেহ হয়।
মামলার বাদী ভুক্তভোগী নাজমুল জানান, একই খামে শেখ হাসিনা বিশ^বিদ্যালয় এবং মেডিক্যাল কলেজের নিয়োগপত্র আসায় তাদের ভেতরে সন্দেহ হয়। পরে প্রতারক চক্র বাকী টাকা নেয়ার জন্য রেন্ট এ কার ভাড়া নিয়ে স্থানীয় দালারের কাছে নেত্রকোনার কাটলি এলাকায় আলী ইমামের ভাড়াকৃত বাসায় আসলে স্থানীয়দের নিয়ে ভুক্তভোগীরা প্রতারকদের আটক করে।
এসময় টাকা ফেরত দেয়ার জন্য চাপ দেয়। এতে মোবাইলে ২ লাখ টাকা প্রতারক চক্র ফেরতও দেয়। এরপর পুলিশে সোপর্দ করলে নেত্রকোনা মডেল থানার পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পেয়ে কোর্টে প্রেরণ করে।
নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি খন্দকার শাকের আহমেদ জানান, শেখ হাসিনা বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিষ্টার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. সুব্রত কুমার আদিত্য স্বাক্ষরিত অফিস সহকারী পদে আল নোমান নামের অফিস সহকারী পদে একজনকে নিয়োগ পত্র দেয়। এমন বেশ কটি পদে স্বাক্ষর করা নিয়োগপত্র পওয়া গেছে। এভাবেই স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এ কে এম আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত পার্থ নন্দী নামসহ বেশ কজনের নিয়োগপত্র পাওয়া গেছে। তাদেরকে নাকি গোপনে নিয়োগ হবে বলে গোপনেই চাকিরি দেবার নামে টাকা গুলো হাতিয়ে নিয়েছে।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুনসী সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এরা বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন পরিচয় দিয়েছে। এদের সাথে স্থানীয় এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউ জড়িত রয়েছে কিনা সেটিও দেখা হচ্ছে। পুলিশ রিমান্ড চেয়েছে।