হুমায়ুন কবির,কেন্দুয়া:
ছোট একটি পাখির নাম বাবুই। দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। যেমন সুন্দর তেমনি তার শৈল্পিক। অন্য যে-কোন পাখির থেকে বাবুই পাখি একদমই আলাদা।
তাইতো কবি রজনীকান্ত সেন একটি কবিতা রচনা করেন-স্বাধীনতার সুখ। আর এতে লিখেছেন, বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই! আমি থাকি মহা সুখে অট্টালিকা পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি ঝড়ে। বাবুই হাসিয়া কয়; সন্দেহ কি তায় ! কষ্ট পাই তবু থাকি নিজেরই বাসায়। পাকা হোক তবু ভাই পরের বাসা, নিচ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর কাসা।
এই জনপ্রিয় কবিতাটি পাখি দুটির একটি বাবুই পাখি। আজকাল আর আগের মত গ্রামগঞ্জে দেখা মেলেনা এই পাখির। দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে জনপ্রিয় পাখিটি। এইতো এক দশক আগেও গ্রাম-বাংলার পথে-প্রান্তরে প্রকৃতির বয়ন শিল্পী বাবুই পাখি ও তার বাসা দেখা যেতো।
কিন্তু সভ্যতার পরিবর্তন, আর অপরিকল্পিত গাছ কাটায় পাখির বাসস্থান ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় প্রকৃতির নিখুঁত স্থপতি, বাবুই পাখি ও তার বাসা আজ হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় গ্রামগঞ্জের তালগাছ, সুপারিগাছ, খেজুরগাছ ও নারিকেল গাছে বেশি দেখা যেতো।
আর এই সব গাছে বাবুই পাখি বসবাস করত, সেই গাছের পাতায় এ পাখির শৈল্পিক বাসা তৈরি করত যা প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও গাছ থেকে কখনও ছিঁড়ে পড়তনা। কোন না কোন ভাবে ঝুলেই থাকতো।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বাবুই পাখি একটি বাসা তৈরিতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে। যা দেখে যে কারও কাছে চিন্তার খোরাক হত। ভাবতে ভাবতেই ভাবনায় সময় ফুরয়া যেতো। বাবুই পাখি দল বেঁধে বসবাস সহ বাসা তৈরি করে।
এছাড়াও এরা দল বেঁধে কিচিরমিচির শব্দ করে ডাকাডাকি করে। তবে এদের মধ্যে পুরুষ বাবুই পাখি বেশ উজ্জ্বল তাতেই বুঝা যায় ওটা পুরুষ পাখি। স্ত্রী বাবুই পাখিগুলো ডিম দেয়ার সাথে সাথেই পুরুষ বাবুই খুঁজতে থাকে। প্রজনন প্রক্রিয়ায় স্ত্রী বাবুই ডিমে তাপ দেয়ার মধ্যেই বাচ্চা ফোটে।
বাচ্চা ফোটার কিছু দিন পর বাবুই বাচ্চা বাসা ছেড়ে অন্যত্র উড়ে যায়। নিজেরাই গড়ে তোলে বাসা। এক কথায় সয়ংসম্পূর্ন। আর এ সমস্ত বাবুই পাখির প্রজনন সময় হলো ধান ঘরে উঠার মৌসুম। বর্তমান সময়ে গ্রামগঞ্জ থেকে দিন দিন বাবুই পাখি ও তার বাসা বিলুপ্তির পথে।
এর কারণ হিসেবে বলাই চলে, পরিবেশ বিপর্যয় ও অসচেতনতায় ঝোপঝাড় উজাড় হওয়া, মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার ও বনভূমি কমে যাওয়ার ফলে বাবুই পাখির অস্তিত্ব সংকটাপন্ন।
এ বিষয়ে নেত্রকোনার কেন্দুয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী চৌধুরী কাজল বলেন, একসময় সকালের ঘুম ভাঙ্গত পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনে আজকাল আগের মত এত পাখি নেই। আর বাবুই পাখি তো বলতে গেলে দেখাই মিলেনা। তিনি মনে করেন, হয়তো এক সময় আসবে বাবুই পাখি নামের একটি পাখি যে এত সুন্দর করে বাসা তৈরি করতে পারতো এবং সেটি কবিতায়ও ঠায় পেয়েছে তা আগামী প্রজন্মের বাচ্চারা কোন ভাবেই বুঝতে চাইবেনা।
কারণ তারা তো বই পুস্তক পড়ে বাবুই পাখির নাম জানবে দেখতেতো পারবে না তাই। তাই তিনি, বাবুই পাখি ও তার বাসা টিকিয়ে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ প্রকৃতিপ্রেমী লোকজনদেরকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।