সোহান আহমেদ:
২০১৯ সন থেকে সরাকারীভাবে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ থাকলেও নেত্রকোনার সীমান্ত উপজেলা দুর্গাপুরে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে চলছে পাথর উত্তোলন। সোমেশ্বরী ও কংশ নদীর বিশাল নৌপথ ব্যবহার করে নিরাপদ ও নির্বির্ঘে অবৈধ পাথর সরবরাহ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। দীর্ঘদিন এমন অবস্থা চললেও তেমন কোন পদক্ষেপ নেই কতৃপক্ষের। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করেই পাথর উত্তোলন করছে একটি সিন্ডিকেট।
স্থানীয় সূুত্রে জানা যায়, পাহাড়ী সোমেশ্বরী নদীর বিভিন্ন অংশ থেকে ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করে প্রতিদিন পাথর উত্তোলন করছে দূর্গাপুর উপজেলার গাওকান্দিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন (মোতালেব) চেয়ারম্যানের ছেলে সোহাগ ও স্থানীয় এক নারী টুনি নামের একটি সিন্ডিকেট। এতে জরিত রয়েছেন স্থানীয় অর্ধশত বালু ও পাথর ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন ধরেই চলা দিনরাত ড্রেজার মেশিনের আওয়াজে অতিষ্ট গ্রামবাসী। প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে পাচার হওয়া এসকল কোটি টাকার খনিজ সম্পদ লুটপাটকে ঘিরে গড়ে উঠেছে চাঁদাবাজি সিন্ডিকেট। নৌরুটে শত শত বলগেট দিয়ে পাথর পরিবহনের সময় ছোট ছোট নৌকায় ৫/৬ জনের দল করে বিভিন্ন স্থান থেকে নিচ্ছে চাঁদা। এদিকে পাথর উত্তোলনে বাধা দিলে স্থানীয়দেরকে মামলা হামলা সহ প্রাণনাশের হুমকির মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
কংশ ও সোমেশ্বরী নদীর নিরাপদ রুটকে পুঁজি করে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও বিভিন্ন ভূইফুর সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে নৌযান থেকে অসংখ্য স্থানে ব্যাপক চাঁদাবাজি করে আসছে একটি সিন্ডিকেট। প্রতি নৌকা থেকে ৫ শ থেকে দুই হাজার টাকা পযর্ন্তে চাঁদা আদায় করছেন এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা। প্রতিদিন এই রুটে অন্তত অর্ধ শতাধিক বলগেট নৌযান চলাচল করে বলে জানান স্থানীয়রা। এ পথে শুধুমাত্র অবৈধ পাথরই নয় নিরাপদে অবাধেই চলছে ভারতীয় বিভিন্ন অবৈধ পণ্য সামগ্রী সরবরাহ।
এদিকে অবৈধপথে উত্তোলিত পাথরের মূল্য অনেক কম হওয়ায় ব্যাবসায়ীরা অল্প পুঁজিতে লাভবান বেশি। প্রতিদিন দুর্গাপুর উপজেলার ঝানঝাইল রামবাড়ি, বিড়িশিড়ি চৈতালী ঘাট, শিবগঞ্জ সহ বিভিন্ন স্থান থেকে বিশাল বিশাল আকৃতির বলগেট ট্রলার নিয়ে পাথর পরিবহন করছেন চোরাকারবারি ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় ভাবে প্রচারনা রয়েছে প্রতি ফুট পাথর চালানে ৮ টাকা/পাঁচ টাকা/৪টাকা/ ২টাকা হারে ভাগ চলে যায় বিভিন্ন দপ্তরে। ফলে তেমন কোন বাঁধা নেই বলে জানান স্থানীয়রা। প্রতিফুট পাথারের বর্তমান মূল্য ৬০/৬৫ টাকা বলে জানা গেছে।
চলতি সপ্তাহে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোরবেলায় অসংখ্য বলগেট ট্রলার পাথর পরিবহন করে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে অবৈধ ভাবে উত্তোলিত হওয়ায় দেশের অন্যান্য স্থানের পাথরের তুলনায় এখানকার পাথরের দাম কিছুটা কম। তাই এখান থেকে দীর্ঘদিন ধরে পাথর সরবরাহ করে আসছেন তারা। যদিও পথে পথে গুনতে হচ্ছে অবৈধ চাঁদা। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জ থেকে আসা পাথর ব্যবসায়ী নূর মুহাম্মসহ আরো অনেকেই। প্রশাসনকে একরকম বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধ পথে পাথর উত্তোলন ও সরবরাহ করে আসছে সোহাগ ও টুনি সিন্ডিকেট। এরসাথে জড়িত রয়েছে স্থানীয় অর্ধশত অবৈধ পাথর উত্তোলনকারী সদস্য।
যদিও সোহাগ ও টুনি মোবাইল ফোনে জানান, পাথর উত্তোলন অবৈধ জেনেও স্থানীয় সংসদ সদস্যের মৌখিক অনুমতি ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন তারা। ব্যবসায়ী সোহাগ জানান ডাক ছাড়া তো অবশ্যই অবৈধ। কিন্তু তারা ছাড়াও অন্য অনেকেই রয়েছেন প্রভাবশালী। এই পাথরগুলো স্থানীয় গরীবরা বিক্রি করে খায় বলেও জানান সোহাগ।
তবে জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান জানান, অবৈধ পথে পাথর পরিবহন ও উত্তোলন নিষিদ্ধ থাকলেও একটি কুচক্রী মহল নদীর বিভিন্ন অংশে পাথর উত্তোলন করে আসছে খবর পেয়েছি। বালু তোলার সাথে সাথে অনেকেই এ কাজটি কারার চেষ্টা করছে রাতের আঁধারে। আমাদের এ সকল খনিজ সম্পদ রক্ষায় অচিরেই এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।