নেত্রকোনার খালিয়াজুরীর মেন্দিপুর ইউনিয়নের সাতগাঁও গ্রামে নিজস্ব জমিতে কাঠা তৈরি করায় প্রতিপক্ষের হামলায় আহত বেশ কয়েকজন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে সাতগাঁও বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ক্ষমতা বলে গতবছর মেন্দিপুর ইউনিয়নের ইছাপুর মৌজায় সাতগাঁও মৎস্যজীবী সমিতিকে ১০ একর জায়গা মাত্র ৫ হাজার টাকায় ইজারা দিয়েছে খালিয়াজুরী উপজেলা প্রশাসন।
কিন্তু মৎস্যজীবীদের নামে আনলেও দীর্ঘদিন ধরে অন্তত তিন শতাধিক একর ভূমি জোর জবরদস্তিতে শাসন করে আসছিলেন স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। আর এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাতগাঁও এমবিবি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আওয়ামীলীগ নেতা ওয়ালিদ মাস্টার, উপজেলা যুবলীগ নেতা শামীমসহ বেশকজন উগ্রপন্তী সদস্য। এরই ধারাবাহিকতায় এবার বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা। ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে নিজেদের চাষাবাদের জমিতে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে গাছের ডাল পালা ও নেট দিয়েছিলেন। আর এই বিষয়টি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না তিন কিলোমিটার দূরত্বে নেয়া মাত্র ১০ একর জায়গার প্রভাবশালী মৎস্যজীবীরা। বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে খালিয়াজুরী থানায় সাধারণ অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করতে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে উপস্থিত হন। এ সময় পুলিশের ভূমিকা অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে স্থানীয়দের, এমনটাই জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
তারা জানান, সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে এস আই বিপ্লবের উস্কানিতে বেশকজন পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতে সাতগাঁও মৎস্যজীবী সমিতির কর্ণধার ওয়ালিদ মাস্টার, তার ছোট ভাই হেলাল মিয়া, লাঠিয়াল রফিকুল ইসলাম, শামীম মিয়াসহ বেশকজন জমির মালিক আবু ইউসুফ ও আমির হামজাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করে।
একপর্যায়ে আবু ইউসুফের দাড়িতে ধরে কিল ঘুসি মারতে থাকেন। এ নিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে পুলিশের সামনেই কৃষকদের দেয়া নেটজাল ছিঁড়ে ফেলা হয়। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জমির মালিকগন।
এদিকে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ আবু ইউসুফকে আটক করে নিয়ে গেলেও কিছুক্ষণ পরেই ছেড়ে দেয়। জমির মালিক কৃষক আবু ইউসুফ ও আমির হামজা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের প্রায় শত কাঠা জমি থাকলেও কখনো মাছ ধরিনি।
এবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জায়গাটিতে এবার মাছ ধরার উদ্দেশ্যে কিছু ডালপালা ফেলে নেট দিয়ে মাছ আটকে ছিলাম। কিন্তু তিন কিলোমিটার দূরত্বে মাত্র ১০ একর জায়গা মৎস্যজীবী সমিতির নামে ইজারা নিয়ে তিনশত একরের বেশি জায়গা দখল করে সাধারন মানুষকে জিম্মি করেই জোরপূর্বক মৎস্য আহরণ করে আসছেন প্রভাবশালীরা।
এবার আমাদের নিজের জায়গায় মৎস্য আহরণে ব্যবস্থা নিলে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ নিয়ে এসে আমাদের ডালপালা সরিয়ে নেট ছিড়ে ফেলে দেয়। এতে করে আমরা মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
এ ব্যাপারে ওয়ালিদ মাস্টারের ফোনে কল করলে বেশ কয়েকবার একবার ফোন রিসিভ করে এতো বার ফোন দিচ্ছি কেন? বলে ধমক দিয়ে ফোনটি কেটে দেন। এদিকে পুলিশের এসআই বিপ্লবের ফোন বন্ধ থাকায় ঘটনা স্থলে আমির হামজার ফোনে ইজারাকৃত জায়গার তিন কিলোমিটার দূরত্বে জাল ছিঁড়ে ফেলা বিষয়টা জানতে চাইলে। তিনি জানান আপনি এসে ম্যাপে দেখে যান। পরে ফোনটি কেটে দেন।
এদিকে ঘটনার পর রাত ৮ টার দিকে সাতগাঁও বাজারে প্রতিরক্ষির লোকজন আবারো আমির হামজা ও ইউসুফের উপর হামলা চালায়। এ সময় আমির হামজা, পাইলট, ইব্রাহিমের মাথায় গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হয়। পরে সাধারণত উদ্ধার করে বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করছেন বলে জানা যায়।
এ ব্যাপারে নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুয়েল সাংমা জানান, বিষয়টি তিনি অবগত হয়েছেন এবং একজন ভূমি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন তদন্ত করতে। তাছাড়া পুলিশের উপস্থিতিতে এমন পরিস্থিতি কাম্য নয়। তারা শুধুমাত্র তদন্ত করবেন। জাল ছিঁড়ে ফেলা কিংবা নিজস্ব জমিতে মৎস্য আহরণে বাধা দিতে পারে না। ভূমি কিংবা জলমহাল নিয়ে জটিলতা শুধুমাত্র উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ ব্যবস্থা নিতে পারেন। জমির প্রকৃত মালিকরা তাদের জায়গায় মাছ ধরতেই পারেন।
এ ব্যাপারে খালিয়াজুরী থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল বাশার জানান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করতে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি ঘটনাটি নিয়ে আগামী ১৭ তারিখ থানায় বসবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু জাল ছিড়ে ফেলার বিষয়টি সম্পর্কে তেমন কোন মন্তব্য করেননি। দুই পক্ষকেই শান্ত থাকতে বলা হয়েছে। তবে জাল ছিড়ে ফেলা কিংবা পুলিশের উপস্থিতিতে অকথ্য বাসায় গালাগাল মারধোর করার বিষয়টি নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি তিনি।