সোহান আহমেদ:
নেত্রকোনার আটপাড়ায় ভিত্তিহীন মামলায় পক্ষ নিয়ে তদন্ত করতে গেলেন উপজেলা নির্বাহি অফিসার মাহফুজা সুলতানা। যদিও পরবর্তীতে উভয় পক্ষের পুরো ঘটনা না শোনে হত্যা চেষ্টা মামলার হুকুমের প্রধান আসামি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে কর্মরত সিদ্দিকুর রহমান আশিল মিয়া ও তার নিজস্ব লোকজনের একতরফা বক্তব্য শুনেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তিনি।
জানা গেছে, পূর্ব শ্রুতার জের ও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আটপাড়া উপজেলার স্বরমুশিয়া ইউনিয়নের যাদবপুর গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলার ঘটনায় গুরুতর আহত হন তোফাজ্জল হোসেন (৫৫) সহ বেশকজন। পরবর্তীতে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ময়মনসিংহ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাসব্যাপী চিকিৎসা শেষে সুস্থ হন তিনি।
কিন্তু ঘটনার পরদিন আটপাড়া থানায় মামলা দায়ের করেন আহত তোফাজ্জলের চাচাতো ভাই মতিমিয়া। ৩২৬ ধারায় মামলাটি আমলে নিয়েছেন আদালত।
এদিকে হামলার ঘটনা আড়াল করতে লুটপাট ও মিথ্যা হামলার অভিযোগ এনে আদালতে মামলা দায়ের করেন সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে জুনায়েদ সিদ্দিকী।
এরই প্রেক্ষিতে গেল কয়েক মাস ধরে আদালত বিষয়টি পর্যালোচনা করে যে ধারায় মামলাটি দায়ের হয়েছে তার কোন সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পাড়ায় হয়তো আগামী তারিখেই মামলাটির শুনানি হতে পারে ধারণা বিবাদী পক্ষের। এমন অবস্থায় সরকারি চাকরির দোহাই দেখিয়ে নানা অপচেষ্টা চালিয়েও কোন উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে মিথ্যা বানোয়াট, ভিত্তিহীন লিখিত অভিযোগের তদন্তে উপজেলা নির্বাহি অফিসারকে নির্দেশনা পাঠানোর ব্যবস্থা নেন।
এমন নির্দেশনা পেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে সিদ্দিকুর রহমান আশিল মিয়ার বাড়িতে শিশু সন্তানকে নিয়ে তদন্তে যান উপজেলা নির্বাহি অফিসার। এ সময় আশিল মিয়ার পরিবারের লোকজনের সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণ করেন তিনি। এদিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়া তোফাজ্জল হোসেনের ওপর হামলার ঘটনার বাদী মতি মিয়া ও সাক্ষীগণ উপস্থিত থাকলেও নির্বাহি অফিসার তাদের কোন সাক্ষ্য প্রমাণ কাগজপত্র কিছুই দেখতে চাননি। উল্টো তার উপস্থিতিতেই মামলার আসামি সিদ্দিকুর রহমান বাদীপক্ষের লোকজনদেরকে ধমকের সুরে জেরা শুরু করেন।
এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে স্থানীয় সংবাদ কর্মীদের উপস্থিতির কথার বিষয়টি অবগত হন তিনি। এ সময় সাংবাদিকদের এ ঘটনার বিষয়ে কিছু রেকর্ড নিতে নিষেধ করেন। সেই সাথে সংবাদকর্মীদের আসতে বলেছে কে? জানতে চেয়ে অশালীন আচরণ শুরু করেন।
এসময় সংবাদকর্মীরা কিছুটা বিব্রত বোধ করলেও প্রতি উত্তরে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় সহ কিছু বিষয় ছাড়া সংবাদ সংগ্রহে কোথাও যেতে হলে দাওয়াত কিংবা অনুমোদন প্রয়োজন হয় না বলে সাফ জানিয়ে দেন তারা।
এরপর জামিনে মুক্ত আসামি সিদ্দিকুর রহমান আশিল মিয়ার বাড়ি থেকে আশা আপ্যায়নের নাস্তা পানি গ্রহণ না করে তারাহুরো করে কিছুক্ষণের মধ্যেই কোন কথা না বলেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তিনি।
এদিকে ভিত্তিহীন মামলার তদন্তে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উপস্থিতি ও সাক্ষ্য গ্রহনের ঘটনা বিরল। এতে স্থানীয়দের মাঝে কিছুটা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া তোফাজ্জল হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যরা।
সেইসাথে তেমন কিছু না বলেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করায় অনেকটাই হতভম্ব ও বিভ্রান্তিতে পড়েছেন গ্রামবাসী। স্থানীয় প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার এমন ভূমিকায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যদিও দীর্ঘদিনদিন হয় সরকারি কর্মচারী সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি সহ নিরীহ মানুষদের হামলা-মামলায় হয়রানির অভিযোগে গণস্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও অদ্যবধি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি জেলা কিংবা উপজেলা প্রশাসন অভিযোগ আহত পরিবারের সদস্যদের।
পরবর্তীতে ঘটনার তদন্তে কী পেলেন? কবে নাগাদ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেন? এ বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহি অফিসার মাহফুজা সুলতানার মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক তদন্তের বিষয়টি অবগত করে সংবাদ কর্মীরা নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কাজী মোঃ আব্দুর রহমানকে অবহিত করেন। এসময় তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বস্ত করেন।