ব্যস্ততম সড়কে হঠাৎ বিকট শব্দ। শুরু হয় চারিদিকে আতঙ্ক। পথচারীরা দিক বেদিক ছোটাছুটি করেন।
খানিকক্ষণ পরেই জানা গেলো কোন বিস্ফোরণ নয় শব্দটি হয়েছিলো বালুবাহী ট্রাকের পিছনের চাকা ফেটে যাওয়ায়।
এরকম ঘটনার সাথে নেত্রকোনার দুর্গাপুরের বাসিন্দারা এখন প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করে।আর এর কারণ হিসেবে বের হয়ে এসেছে গাড়িতে ধারণক্ষমতার মাত্রাতিরিক্ত বালু পরিবহন করা। মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে এমনি এক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে দুর্গাপুর উপজেলার উকিলপাড়া রোডে। যে কারনে এক ব্যাক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
বিরিশিরি দাখিলাই গ্রামের মতিন্দ্র চন্দ্রের পুত্র পলক চন্দ্র দাসকে পাঠানো হয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
স্থানীয়রা জানান, বিস্ফোরণের ঘটনায় বাতাসের সাথে তীব্র বেগে বালু ও পাথরের কণা চোখে মুখে গিয়ে আহতও হচ্ছেন সাধারণ পথচারীরাও । অনেক সময় বড় বড় পাথরের আঘাতে ব্যবসায প্রতিষ্ঠানের কাচের আসবাবপত্র ভেঙ্গেও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও আচমকা তীব্র শব্দ সইতে না পেরে হুশ হারিয়ে ফেলছে পলক সহ এমন আরো অনেকেই । পৌর শহরের উকিলপাড়া রোডে আজকের এই বিস্ফোরণের পর এলাকায় এমন আতঙ্কের ঘটনায় স্থানীয়রা প্রায় কয়েক ঘন্টা সড়কে বালুবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দেয়।
পরে পুলিশ এসে ট্রাকটিকে জব্দ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় আহত পলক চন্দ্র দাসকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে সন্ধ্যায় অবস্থার অবনতি হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় ময়মনসিংহ। স্থানীয়রা আরো জানায়, পৌর শহরের প্রতিটি সড়ক দখল করে অপরিকল্পিতভাবে সোমেশ্বরী নদীর বালু পরিবহনে বেহাল সড়কগুলোও। তার উপর শুকনা মৌসুমে ভেজা বালু পরিবহন করে সড়কগুলোতে তৈরি হয়েছে বড় বড় খানাখন্দ আর কাঁদার স্তুপ। ফলে রাস্তার এপার থেকে ওপার যাওয়াই যেনো দুষ্কর হয়ে পড়ে।
এছাড়াও সড়কগুলো দখল করে অবাধে চলছে অবৈধ লড়ি গাড়ি। তীব্র শব্দের এই যানগুলো দিনরাত চলায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে পৌর শহরের বাসিন্দারা। তার উপর আচমকা চাকা বিস্ফোরণের ঘটনায় সড়কে বের হওয়াই যেনো দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। ব্যবসায়ীরাও একই অভিযোগ করে বলেন, তীব্র শব্দ দূষণের কারণে পৌরশহরে বাসিন্দাদের মাঝে বেড়েছে রক্তচাপ, মাথাব্যথা, বদহজম, অনিদ্রা সহ শব্দ দূষণ জনিত নানা রোগবালাই ।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর এমও) তানজিরুল ইসলাম রায়হান বলেন, দুর্গাপুরে শব্দ দূষণের মাত্রা অনেকাংশেই বৃদ্ধি পেয়েছে । প্রতিদিনই রোগীরা হাসপাতালে শব্দ দূষণ জনিত নানা রোগ নিয়ে আসছেন। আচমকা তীব্র শব্দে একজন সুস্থ মানুষের অনেক আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর অসুস্থ বা বয়স্কদের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে শিশুদের মাঝে তীব্র শব্দ দূষণের কারণে বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ব্যাহত সহ স্নায়ুর মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়। প্রতিনিয়তই এই শব্দদূষণের ফলে কানের টিস্যুগুলো আস্তে আস্তে বিকল হয়ে পড়ে ।
দুর্গাপুর থানার ওসি শাহ্ নুর এ আলম ট্রাকের এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বালু বোঝাই একটি গাড়ির চাকা ফাটায় স্থানীয় ২/১ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ ঘটনায় স্থানীয়রা ট্রাকটিকে আটকে রাখলে পুলিশ গিয়ে ট্রাকটি জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে ।