গেল প্রায় তিন বছর ধরে হাওরাঞ্চলের কৃষকদের মাঝে জমছে না ঈদের আমেজ। এবারও ধান উঠবে ঈদের পরে। গত দুবছর খড়াসহ নানা কারনে নষ্ট হওয়ায় ক্ষতির মুখে তারা। যে কারনে কৃষক পরিবারের আয়ের একমাত্র অবলম্বন বোরো ধান নিয়ে এবারও শঙ্কায়। ফসল ঘরে উঠতে উঠতে কোন ধরনের দুর্যোগে পড়লেই সর্বনাশ। যে কারণে শেষ মুহুর্তেও নিবিড় পরিচর্চায় ব্যস্ত কৃষকরা।
নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরীর বিভিন্ন হাওরের বিস্তৃত মাঠে দুলছে সোনালী ফসল। এসব অঞ্চলের মানুষের আয়ের একমাত্র উৎস্য বোরো ফসলে ঝুলে আছে কৃষকদের ভাগ্য।
বছরে ছয়মাস পানি থাকায় হাওরের মাঠে একটি মাত্র ফসল হয় বোরো ধান। যা দিয়ে কৃষকের বছরের খুরাকিসহ কৃষক সন্তানদেন পাড়াশোনা চলে। পুরো বছরের চলার অর্থ জোগান হয় এই ধান থেকেই। কিন্তু গত তিন বছর ধরে নানা দুর্যোগে রয়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।
গত ২০২২ সনে আগাম বন্যায় কাঁচা ধান কেটে ক্ষতিতে পড়েছেন। পরেরবার দুবছর ধরে খড়ায় ধানে চিটা হয়ে ফলন কমে গেছে। তাই এবার কৃষকরা ভিন্ন জাত লাগিয়েছে। ফলে দেরীতে পাকছে ধান। যে কারণে এবারও ঈদের আগে ফসল না উঠায় তাদের এবছরও ঈদ আমেজ ফিকে। নতুন জামা কাপড় দিতে পারবে না সন্তানদের। পুরনো কাপড়ে কাটবে ঈদ। তারপরও তাদের আশা রক্ষা হোক ফসলটা। ফলন ভালো হলে আগামী দুবছর চলবে খাবার খরচ।
কিন্তু এবারও যদি কোন দুর্যোগে পড়ে যায় তাহলে আর দুঃখের সীমা থাকবে না এখানকার কৃষক জনগোষ্টির। যে কারণে নিবিড় পরিচর্চায় ধানের গাছ পাহাড়া দিচ্ছেন কৃষকরা। শেষ বেলাতেও পোকা দমনের স্প্রে করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। আশা এবার বাম্পার ফলনের।
গোবিন্দ্রশী হাওরের ধানে পোকা দমনে স্প্রে ছিটানো জুনাইদ মিয়া বলেন, আমাদের চিন্তা ধান কি করে ঘরে তুলব। এবার যেহেতু ঈদের পরে ধান কাটা লাগবে তাই আমাদের কেনাকাটা করা হবে না। ধান বিক্রি করলে আমাদের হাতে টাকা আসে। এছাড়া তো চাকরি নেই যে বেতন পাবো। ফসল বিক্রি করে চলে পাড়লেখাও। শেষ মুহুর্তেও স্প্রে করছি যাতে পোকায় না ধরে। কারণ গেল কয়েক বছর ধরে বন্যার মতোই পোকার উপদ্রæব হয়েছে। চিটা হয়ে ধান নষ্ট হয়ে যায়।
মো. আপন খান জানায়, এই বছর একটা শার্ট প্যান্ট কেনার পরিকল্পনা ছিলো। কিন্তু ধান কাটাই শুরু হবে ঈদের পরে। এখনো পরিপক্ক হয়নি। তাই আর কেনার সুযোগ নেই।
একটা ফসিল হয় আমরার। এইটা এইবার বাইট্টায়া (দেরী) গেছে। এহন উপরের আল্লাহ যদি রক্ষা করে। গাঙ্গে পানি আইছে হুনতাছি। অহন আর কয়ডা দিন সময় দিলেই ধানডি কাডন যাইবো। পানি আইয়ারলে তো বেডা বেডি মিইল্ল্যা কাইট্টও রক্ষা করণ যায়না। ঈদো আনন্দ করনের চায় অহন ধানের চিন্তা। আল্লায় দিলে খাইয়া বাচন যাইবো বলে জানান সাজেদা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান ফলন ভালো হয়েছে জানিয়ে বলেন, জেলায় এবছর বোরো আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩২০ হেক্টর। তারমধ্যে হাওরাঞ্চলে ৪১ হাজার ৫শ হেক্টর। সব মিলিয়ে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে ৮ লাখ ২ হাজার ৪৪৫ মেট্রিক টন।