নেত্রকোনার বারহাট্টায় স্ববজি চাষী প্রশিক্ষন পরবর্তী পরীক্ষামূলক লাল গোলাপি ফুলকপি চাষ করে লাভবান হয়েছেন কৃষক সন্তোষ বিশ্বাস। আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করার কথাও জানান তিনি। এ বছর মাত্র দুই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ করে জামালপুর থেকে আনা রঙিন ফুলকপি চাষ করে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন তিনি। এতে যেমন লাভ হয়েছে গ্রাম পর্যায়ে রঙিন কপিতে সাধারণের আগ্রহও বেড়েছে। ফুল কপি শুধু সাদা হয় না। রঙিনও হয় এটা দেখে অনেকেই ১০০ টাকা দিয়ে ১৪ থেকে ১৫ গ্রাম ওজনের একটি রঙিন কপি কিনেছেন। এই কৃষক সারা বছরই তার জমিতে নানা ধরনের শাকস্ববজির আবাদ করে থাকেন।
জেলার বারহাট্টা উপজেলা সদর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের কৃষক সন্তোষ বিশ্বাস বলেন, আমার সব মিলিয়ে ১১ কাঠা জমি। তার মধ্যে তিন কাঠা জমিতে খাবারের জন্য ধান চাষ করি। বাকি ৭ থেকে ৮ কাঠা জমিতে সারা বছরই বিভিন্ন জাতের স্ববজি চাষ করি। আমি গত ২০০০ সন থেকে স্ববজি চাষ করছি। পড়াশোনা যতটুকু করেছি তা দিয়ে মনে হয়েছে কৃষি কাজ করলেই চাকুরির চেয়ে ভালো করবো। আমার বাবা মা কৃষক। আমার স্ত্রীও ডিগ্রী পাশ করে আমার সাথেই কৃষি কাজ করেন। আমার ছেলেকে পড়াচ্ছি কলেজে। সর্বোপরি আমি এই কৃষিকেই আমার নেশা এবং পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি।
আমি কৃষি অফিসের একটি প্রকল্পের মাঠ পরিদর্শনে গিয়েছিলাম জামালপুর সহ বিভিন্ন জায়গায়। জামালপুর গিয়ে একটি গ্রীণ হাউসে রঙিন কপি দেখে আমার ভালো লাগলো সেখান থেকে ৬০০ টাকার চারা কিনে আনি। এগুলোতে এক মণ জৈব সার দিয়েছি। কৃষি বিভাগ বলেছে এগুলো এখানে হবে না। কিন্তু আমার বিশ^াস ছিলো হবে। জানুয়ারী মাসের ১৩ তারিখ থেকে চারা রোপন করেছিলাম। মার্চ মাসের ১৩ এবং ১৪ তারিখ থেকে উঠিয়ে বিক্রি করা শুরু করেছি। তারা আরো বলেছিলেন এই কপি দুই থেকে আড়াইশ গ্রাম ওজন হবে। কিন্তু আমার এক একটা কপি ১৪ শ থেকে ১৫ গ্রাম ওজন হয়েছে। খেতেও স্বাদ। দেখতেও সুন্দর। আগের বছর ব্রæকলি চাষ করেছিলাম। কিন্তু প্রথমবার কিছু ভুল ভ্রান্তি থাকায় ক্ষতি হয়েছে। এবার তাই কম করে করেছি এটি। কিন্তু প্রচুর লাভ হয়েছে। সারা বছর করলা, সজনে, লাল শাক, টমেটো চাষ করি। জমি থেকেই পাইকাররা বেশিরভাগ সময় নিয়ে যান। যে কারণে আমার এটা চাকরির মতো হয়ে গেছে। আগামীতে ৭ কাঠা জমিতে এই রঙিন ফুলকপি চাষ করবো।
নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ সহকারী কৃষি অফিসার বিদ্যুৎ মজুমদার বলেন, ফুলকপি সাদা রঙিন পার্থক্য শুধু রঙিন টাতে ভিটামিন ‘এ’ বেশি থাকে। সময়ও কম লাগে। রঙিন যে কোন স্ববজিতেই ভিটামিনের পরিমাণ বেশি থাকে।
এ ব্যাপারে বারহাট্টা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান বলেন, ৭০ থেকে ৭৫ দিন লাগে এই রঙিন ফুলকপি চাষে। আমাদের কৃষকদেরকে সরকারীভাবে বিনামূল্যে উদ্বুদ্ধকরণ প্রশিক্ষণে উপজেলার ৫ জন কৃষককে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখে তিনি উদ্বুদ্ধ হন। আমরা সার্বক্ষণিক যতœ করেছি। চারশর মতো চারা রোপন করেছিলো। কিন্ত দুইশ চারা টিকেছে। আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার পরিকল্পনা আছে।
জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ এফ এম মোবারক আলী জানান, আমরা কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধকরণ প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম। ভ্রমণসহ মাঠপর্যায়ে তারা গিয়েছিলেন। জামালপুর থেকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে বীজ এনেছিলেন ওই কৃষক।