হুমায়ুন কবির, কেন্দুয়া: আদালতে মামলা করায় নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় প্রতিপক্ষের লোকজনের অত্যাচার-নিপীড়নের শিকার হয়ে গত তিন মাস ধরে বাড়ি ছাড়া দুটি পরিবার। মামলা তুলে না নেওয়ায় পরিবার দুটির বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটিয়েছে বিবাদীরা। ঘটনাটি ঘটেছে কেন্দুয়া উপজলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের সরাপাড়া গ্রামে।
এদিকে আদালতে দ্রুতবিচার আইনে দায়ের করা মামলায় হাজিরা দিয়ে বাড়ি এসে বিবাদীপক্ষের লোকজন পুনরায় বাদীপক্ষের বাড়িঘরসহ তাদের লোকজনের উপর হামলা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গত ৫ এপ্রিল রাতে ইসহাক মিয়া বাদী হয়ে প্রতিপক্ষের ১২ জনের নামোল্লেখ করে কেন্দুয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সরজমিনে জানা গেছে, সরাপাড়া গ্রামের আব্দুল মন্নাফের ছেলে পাশার মিয়া ও তাদের লোকজনের সাথে একই গ্রামের ওয়াহিদ উদ্দিনের ছেলে শহীদ মিয়া গংদের জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল।
এরই জের ধরে ২০২০ সালের ১৮ ডিসম্বর প্রতিপক্ষের লোকজন পাশার মিয়া এবং তার চাচাতো বিদ্যা মিয়ার বাড়িঘরে হামলা-ভাংচুর ও লুটপাট করে এবং তাদের বাড়ির পুকুর পাড়ে রোপন করা গাছ কেটে ফেলে। এ সময় বাড়ির লোকজন বাধা দিতে গেলে তাদেরকেও মারপিট করে। পরে এ ঘটনায় পাশার মিয়া বাদী হয়ে প্রতিপক্ষের ৯ ব্যক্তির নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৮/১০ জনের বিরুদ্ধে নেত্রকোনা আদালতে দ্রুতবিচার আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার দায়েরের পর আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে প্রতিপক্ষের লোকজন। তারা মামলার হাজিরা দিয়ে জামিনে এসে বাদীপক্ষের লোকজনকে মামলাটি তুলে নেওয়ার হুমকি ধামকি দিতে শুরু করে। কিন্তু মামলা তুলে না নেওয়ায় বাদীপক্ষের লোকজনের উপর তারা নানা রকম অত্যাচার নিপীড়ন শুরু করে।
এ অবস্থায় আসামীদের অত্যাচার নিপীড়ন ও হুমকি ধামকির কারণে গত ৩ মাস যাবত বাড়ি ছাড়া রয়েছে বাদী পাশার মিয়া ও বিদ্যা মিয়ার পরিবারের লোকজন। আসামীদের ভয়ে বর্তমানে তারা বাড়িতে যেতে পারছেন না। এদিকে গত ৫ এপ্রিল সকালে পাশার মিয়া তার পিতা আব্দুল মন্নাফ ও স্ত্রী হালেমা আক্তারকে সাথে নিয়ে গোপনে তাদের বাড়িতে গেলে সংবাদ পেয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের উপর হামলা করে মারপিট করে এবং বাড়িঘর ভাংচুর করে।
এ ঘটনায় গত ৫ এপ্রিল রাতে পাশার মিয়ার বড় ভাই ইসহাক মিয়া বাদী হয়ে প্রতিপক্ষের ১২ জনের নামোল্লেখ করে কেন্দুয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ইসহাক মিয়া বলেন, শহীদগংরা আমাদের মারপিটসহ বাড়িঘর ভাংচুর-লুটপাট করায় আদালতে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুতবিচার আইনে মামলা দায়ের করলে তারা আমাদের ওপর আরো ক্ষিপ্ত হয়। মামলা তুলে নেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ দেয় এবং আমাদের ওপর নানাভাবে জুলুম-অত্যাচার শুরু করে। তাদের ভয়ে আমরা ৩ মাস ধরে গ্রাম ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আছি।
এছাড়া গত ৫ এপ্রিল আমার বাবা, ছোট ভাই পাশার মিয়া ও তার স্ত্রী হালেমা আক্তার গোপনে বাড়িতে গেলে আসামীরা তাদের মারপিট করে। আহত হালেমা আক্তার ৭ মাসের অন্ত:সত্তা। ডাক্তার বলেছে- তার গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতিপক্ষের শহিদ মিয়া বলেন, সরকারি হালট দখল করে তারা বাড়ি তৈরি করে রেখেছে। গ্রামের লোকজন হালট ছেড়ে দিতে বলায় তারা নিজেদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে ও গাছপালা কেটে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। তারা সমাজের লোকজনের কথা শুনে না।
এ বিষয়ে কেন্দুয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহ নেওয়াজের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করা হচ্ছে। সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে দুটি পরিবারের বাড়ি ছেড়ে থাকার বিষয়টি আমার জানা নেই।