সাইফুল আরিফ জুয়েল, মোহনগঞ্জ:
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে মোহাম্মদ হোসাইন হীরা (৩৯) নামে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালককে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। অপহরণ করে গলায় ছুরি ঠেকিয়ে একটি নির্জন ফিশারিতে নিয়ে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। মুক্তিপণের কিছু টাকা দেওয়ার পর হীরাকে ছুরিকাঘাতে গুরুতর জখম করে মোটরসাইকেলটি কেড়ে নিয়ে রাস্তায় ফেলে যায়।
হীরাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তার হাতে গভীর ক্ষত স্থানে ১৪টি সেলাই লেগেছে। শরীরে রয়েছে অসংখ আঘাতের চিহ্ন।
শুক্রবার সকালে অপহরণের শিকার হীরা এ তথ্য জানিয়েছেন। এরআগে গত মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে মোহনগঞ্জ পৌরশহরের পাইলট স্কুল মোড় থেকে হীরাকে অপহরণ করা হয়।
এ ঘটনায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে বৃহস্পতিবার বিকালে মোহনগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী মোটরসাইকেল চালক হীরা সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার বাঘাউছা গ্রামের মৃত এমদাদ হোসেনের ছেলে। তিনি বারহাট্টা শহরের মহাজন পাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন।
হীরা জানায়, মোহনগঞ্জ থেকে নেত্রকোনায় ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাই। মঙ্গলবার রাতে মোহনগঞ্জের পাইলট স্কুল মোড় থেকে দুইজন যুবককে ভাড়ায় পাবই এলাকায় নিয়ে যাই। তারা সেখানে গিয়ে গলায় ছুরি ঠেকিয়ে আমাকে একটি নির্জন ফিশারিতে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের সাথে যোগদেয় আরও একজন। তারা আমার মোবাইল ফোন নিয়ে বাড়িতে ফোন করে আমার স্ত্রীর কাছে দেড়লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। সেই সাথে আমাকে ছুরিকাঘাত করে আমার চিৎকার শোনায়। পাঁচ হাজার টাকা আমার বিকাশে পাঠায়। আর বাকি টাকা দেওয়ার জন্য তাদের আশ্বাস দেয় আমাী স্ত্রী। কিন্তু তারা আঘাত করতেই থাকে।
হীরা আরও জানায়, এদিকে ঘটনাটি আমার স্ত্রী বারহাট্টা থানায় জানায়। পুলিশ ফোনের লোকেশন নির্নয় করে উদ্ধারে পাবই এলাকায় টিম পাঠায়। এদিকে টাকার জন্য ফোন করতে থাকে তারা। সারাক্ষণ আমার গালায় ছুরি ধরা ছিল। পরে উদ্ধারে মোহনগঞ্জ ও বারহাট্টা থানার একাধিক টিম বের হওয়ায় শেষে তারা মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে রক্তাক্ত অবস্থা রাস্তায় ফেলে যায়। আমি বেঁচে ফিরব সেই আশা ছেড়ে দিয়ে ছিলাম।
হীরা জানান, মোহনগঞ্জ থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে ওসি স্যার আমাকে একজনের ছবি দেখান। আমি ছবিতে অপহরণকারীদের একজনকে চিহ্নিত করি। পরিচিতদের মাধ্যমে জানি ওই ব্যক্তি টেংগাপাড়া এলাকার হৃদয় ওরফে ক্যাচক্যাইচ্ছা হৃদয়। সে ডিবি পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
বারহাট্টা থানার ওসি খোকন কুমার সাহা বলেন, ওইদিন রাতে হীরার স্ত্রী আমার কাছে ঘটনা জানানোর পরপরই লোকেশন সনাক্ত করে উদ্ধারে টিম পাঠিয়েছি। পরে আমি নিজেও গিয়েছি। আমাদের তৎপরতায় হীরাকে ফেলে গেছে অপহরণকারীরা। ঘটনাস্থল যেহেতু মোহনগঞ্জ তাই ওই থানায় এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগী হীরা ছবি দেখে এখানকার হৃদয় নামে এক যুবককে অপহরণকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। হৃদয় কিছুদিন আগেও এমন ঘটনা ঘটিয়ে এলাকা ছেড়ে ঢাকা চলে যায়। সে ডিবি পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করত বলে জেনেছি। হীরার ব্যবহত মোটরসাইকেলটি উদ্ধারের পাশাপাশি হৃদয়কে ধরতে সর্বাত্বক চেষ্টা চলছে। বিষয়টি নিয়ে গুরুতর দিয়ে কাজ করা হচ্ছে।