নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে সৈয়দা সুমেনা আক্তার (৬৫) নামে এক নারীকে বিভিন্ন কৌশলে অত্যাচার করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার সৎ ছেলেদের বিরুদ্ধে।
অত্যাচারের মাত্র বেড়ে গেলে এক পর্যায়ে সুমেনা তার বাবার বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিলে ফেরার পথ বন্ধ করতে তার নিজ ঘরে তালা লাগিয়ে দেন ছেলেরা। পাশাপশি তার জমিজমাও বন্ধক দিয়ে দিয়েছেন ছেলেরা। নিজের ঘরে ঢুকতে না পেরে আত্মীয়র বাসায় থেকে বিষটি সমাধানে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন সুমেনা।
সুমেনা আক্তার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রায় চল্লিশ বছর আগে বাহাম গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খাঁন তার প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন সৈয়দা সুমেনা আক্তারকে। প্রথম স্ত্রীর আব্দুর রহিম খাঁন লিটন ও লুৎফুর রহমান খাঁন লিটন নামে দুই ছেলে এবং ফারজানা আক্তার নামে এক মেয়ে রয়েছে। পরে সংসার জীবনে সুমেনা আক্তারের ঘরে আরো দুই মেয়ের জন্ম হয়।
এদের মধ্যে প্রথম ঘরের আব্দুর রহিম খাঁন সেনাবাহিনীতে কর্মরত থেকে সদ্য অবসর নিয়েছেন। আর লুৎফুর রহমান খাঁন পুলিশের এএসআই হিসেবে কিশোরগঞ্জর বাজিতপুরে কর্মরত আছেন। উভয় ঘরের তিন মেয়েই বিবাহিত, তারা স্বামীর বাড়িতে থাকেন।
২০১৭ সালের শেষের দিকে মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খাঁন মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি স্ত্রী সুমেনাকে বসতঘরসহ দশ শতাংশ বাড়ি ও পাশে আরো ৩৮ শতাংশ জমি লিখে দিয়ে যান। এসব নিয়ে ঝামেলা শুরু করেন ওই দুই ছেলে। প্রথমে ঘরে আটকে জোর করে বাড়ি লিখে নেওয়ার চষ্টো চালায় ছেলেরা। এতে ব্যর্থ হয়ে কৌশলে মাকে বাড়ি ছাড়া করতে শত্রুভাবাপন্ন প্রতিবেশীদেরকে উস্কে দেন তারা। ফলে ওইসব লোকজন একা বাড়িতে থাকা সুমেনাকে ভয় দেখাতে রাতে টিনের চালে ঢিল ছুঁড়ে ও বিভিন্নরকম অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করে হয়রানি করে।
এসব বিষয় নিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে যান সুমেনা। বীর মুক্তিযোদ্ধা শামছুল হক মাহবুব বলেছেন, বিষয়টা যেহেতু আমাদের মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের তাই চেয়েছিলাম আমরা মুক্তিযোদ্ধারা সবাই বসে সমাধান করে ফেলবো। সবাই বসেছিলাম কিন্তু ছেলেরা আমাদের ডাকে সাড়া দেয়নি।
সমস্যা সমাধানে বড়কাশিয়া বিরামপুরের ইউপি চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন চৌধুরী ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শহীদ ইকবালের কাছে গিয়েছেন সুমেনা। পরে হয়রানির বিষয়টি অবগত করে মোহনগঞ্জ থানায় জিডি করেছেন তিনি। চেয়ারম্যান মো. শহীদ ইকবাল বলেন, দুই পক্ষের সাথেই কথা বলেছি। তারা সবাই আলোচনায় বসতে রাজি আছে।
ভুক্তভোগী সুমনো আক্তার বলেন, ছেলেরা আমার জমি জোর করে নিয়ে বর্গা দিয়েছে। আটকে রেখে বাড়ি লিখে নিতেও চেষ্টা চালিয়েছে। প্রতিবেশী কিছু লোকজন দিয়ে টিনের চালে ঢিল ছুঁড়ে রাতে ভয় দেখায়। অপারগ হয়ে বাবার বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। এখন এসে আমার ঘরে ঢুকবো দেখি তালা লাগিয়ে রেখেছে। আত্মীয়দের বাসায় থাকছি। স্বামীর সহযোদ্ধাদের জানিয়েছি। নেতৃবৃন্দের কাছেও গিয়েছি। ইউএনও বরাবর আবেদন দিয়েছি। আগে একবার থানায় জিডিও করেছিলাম।
তিনি বলেন, আমি বিয়ে হয়ে এসে ওই দুই ছেলেকে কয়েক বছর বয়সের পেয়েছি। আর মেয়েটা তো দুই/তিন মাস বয়সের ছিল। তাদেরকে মায়ের মতো আদর দিয়ে বড় করেছি। এক ছেলেকে পুলিশের এএসআই বানিয়েছি। সেই ছেলেই এখন তার ক্ষমতা দিয়ে আমার জমি অন্যর কাছে বর্গা দিয়েছে। অমাকে হুমকি দিচ্ছে। এর চেয়ে দুঃখের আর কি হতে পারে।
এ বিষয়ে সুমনোর প্রতিবেশী মিনা আক্তার বলেন, ‘ওই নারী (সুমেনা) এই সংসারের জন্য এতটা বছর ধরে কত কষ্ট করেছেন এটা আমি নিজ চোখে দেখেছি। আর এখন ছেলেরা যা করছে, এদের উপর গজব পড়বে।’
এসব বিষয়ে জানতে আব্দুর রহিম খাঁন লিটনের মোবাইলে কল করা হলে ফোন রিসিভ করেননি। তবে লুৎফুর রহমান খাঁন স্বপন তাদের বিরুদ্ধে আনা সৎ মায়ের সমস্ত অভিযোগকে মিথ্যা উল্লেখ করে বলেন, এলাকায় গিয়ে বিষয়টি জেনে দেখুন। জানার জন্য তিনি স্থানীয় কিছু মানুষের নাম বলে দেন। বাড়ির দলিলের বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান আছে তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তবে মুক্তিযোদ্ধারা যখন বিষয়টি সমাধানে ডেকেছিলেন তখন আমার গিয়েছি। জিডির পর থানা পুলিশও এটি নিয়ে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায়নি।