সামুদ্রিক একটি গাংচিলকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে নেত্রকোনার দুর্গাপুরের বন্যপ্রাণি রক্ষাকারী সংগঠন সেভ দ্যা এনিমেল অব সুসং। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার পৌর সভার শিবগঞ্জ এলাকার একটি বাসা থেকে উদ্ধার করে পাখিটিকে। বড় আকৃতির কালো মাথার গাংচিল। পাহাড়ি এলাকায় কোনদিন এমন পাখি এর আগে দেখেনি কেউ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে টানা বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বেড়েছে সোমেশ্বরী নদীর পানি। বুধবার রাতে নদীর পানিতে ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে লাকড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে পাখিটিকে পানিতে ভেসে আসতে দেখে এক ব্যক্তি (প্রকাশে অনিচ্ছুক)। রাতেই তীব্র স্রোত কাটিয়ে পাখিটিকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যান তিনি।
পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় খোকন মুন্সি নামের একজনকে নিয়ে পাখিটিকে বিক্রি করতে দুর্গাপুরে বাজারে আসেন তারা।
শহরের তেরি বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে পাখিটিকে নিয়ে ঘোরাঘুরির এক পর্যায়ে স্থানীয় পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্যা এনিমেলস অফ সুসং সদস্যদের সামনে পড়েন বিক্রেতারা। এসময় তাদের জেরার মুখে তাৎক্ষণিক পাখি নিয়ে পালিয়ে যান। পরে স্বেচ্ছাসেবকরা স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করলে পাখি উদ্ধারে অভিযান শুরু হয়।
এদিকে পাখিটিকে নিয়ে সোমেশ্বরী নদী পার হওয়ার সময় পৌর শহরের ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাশিদ মন্ডলের কাছে ১৫ শত টাকায় বিক্রি করে গা ঢাকা দেন পাখি বিক্রেতা। পাখিটিকে খোঁজ করার খবর স্থানীয় কাউন্সিলর জানতে পেরে উপজেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকদের ফোন করে পাখিটি তার হেফাজতে রয়েছে বলে জানান তিনি। পরবর্তীতে প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকরা পাখিটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
কাউন্সিলর জানান, হাসপাতাল থেকে পায়ের ড্রেসিং করে বাড়ি ফেরার পথে সোমেশ্বরী নদীর ঘাটে এক ব্যক্তির হাতে পাখিটিকে দেখতে পাই। প্রথমদিকে এটি বালিহাঁস ভেবে বিক্রেতাকে দাম জিজ্ঞাসা করি। শুরুর দিকে বিক্রেতা তিন হাজার টাকার উপরে এর দাম চাইলেও অনেক দরদাম করে ১৫শত টাকায় পাখিটিকে কিনে বাড়িতে নিয়ে আসি।
সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসং সংগঠনের সভাপতি রিফাত আহমেদ রাসেল জানান, কালো মাথার এই গাংচিল পাখিটিকে নিয়ে বিক্রেতা বাজারে ঘোরাঘুরির খবর শুনতে পেরে আমরা তাৎক্ষণিক পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে খোঁজ শুরু করি। এক পর্যায়ে আমরা পাখিটিকে দেখতে পেলে বিক্রেতা কৌশলে অপর আরেক ব্যক্তিকে দিয়ে এটি অন্য স্থানে পাঠিয়ে দেন। পরে আমরা বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও দুর্গাপুর থানার ওসির সাথে যোগাযোগ করলে পাখি উদ্ধারের জন্য তারা উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
স্থানীয় কাউন্সিলরের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু পাখিটির অবস্থা খুবই খারাপ। বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং পাখিটি দাঁড়াতে পারছে না।
আমরা প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি এবং সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এর সেবা-যতœ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। সুস্থ হলে পাখিটিকে যথাযথ স্থানে অবমুক্ত করে আসবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিব উল আহসান জানান, তারাই এটির সেবা-যতœ করছে পাখিটির। পুরোপুরি সুস্থ হলে অবমুক্ত করা হবে।