Sunday, December 8, 2024
মূলপাতাঅন্যান্যস্বামীকে চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে গিয়ে লাশ নিয়ে ফিরলেন বিলকিস

স্বামীকে চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে গিয়ে লাশ নিয়ে ফিরলেন বিলকিস

বিয়ে হয় মাত্র দু বছর হলো। এক বছরের পর থেকেই ধরা পড়ে স্বামীর ফুসফুসে ক্যান্সার। করোনাকালে চিকিৎসা করাতে দেশে অনেক দৌড়ঝাপ শেষ করে ভারত নিয়ে গিয়েও বাঁচাতে পারলো না প্রাণের স্বামীকে। অবশেষে লাশ নিয়েই বাড়ি ফিরতে হলো বিলকিছ আক্তারের (২১)।

শুক্রবার (২১ মে) দুপুরে নেত্রকোনার পুর্বধলা উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের বৌলাম গ্রামের মরল বাড়িতে পৌঁছে আবুল কালামের হতভাগা ছেলে মো. সেলিমের (২৪) মরদেহ। বিকালেই পারিবারিক কবস্থানে মরদেহ দাফন করার পর স্ত্রী বিলকিস সহ বাবা আবুল কালামকে নেত্রকোনা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের রেষ্ট হাউসে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখেন জেলা প্রশাসন। আগামীকাল রবিবার (২২ মে) তাদের কোভিড পরীক্ষা করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান।

জেলা প্রশাসক আরো জানান, মৃত সেলিমের ক্যান্সারজনিত রোগের চিকিৎসার প্রয়োজনে তারা মার্চের ১৪ তারিখ ভারতে যান। সেখানে ১৮ মে সেলিম মারা যান। তবে তার সর্বশেষ চিকিৎসা সনদ অনুযায়ী মৃত ব্যক্তি মো. সেলিম (২৫) করোনা নেগেটিভ ছিল। ২০ মে তারা মৃত ব্যক্তির লাশসমেত বেনাপোল সিমান্ত দিয়ে দেশে আসে। আসার পর দুপুরে পূর্বধলা নিজ বাড়িতে পৌছায়। পরবর্তীতে দাফন সম্পন্ন হয়। বিষয়টি অবগত হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে, সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগে ভারত ফেরত ২ জন ব্যক্তির প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয় জেলা যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। এছাড়াও মৃতের সাথে থাকা স্ত্রী সহ দুইজন ব্যক্তির খাবার এবং আনুসাংগিক প্রয়োজনীয়তা সহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিশেষ বিবেচনায় বিলকিছ আক্তার (২১) ও তার শাশুড়ী (৪৫) কে পাশাপাশি পৃথক কক্ষে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। প্রশাসন এবং দায়িত্ব প্রাপ্ত চিকিৎসক কর্তৃক তাদের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে মৃতের স্ত্রী বিলকিছের সাথে কথা হলে এ প্রতিনিধিকে তিনি জানান, এমন ঘটনা যেনো আর কারো বেলায় না ঘটে। আমার বিয়ে হয়েছে মাত্র দু বছর হলো। কিন্তু এক বছরের মাথায় ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়লো। ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ২৫ দিন রেখে চিকিৎসা করালাম। এরপর কত কষ্ট করে ভারতের সিএমসিতে চান্স পেলাম। পরে মার্চের ১২ তারিখ নিয়ে গেলাম। সাথে ছিলেন আমার শ্বশুরও। এরপর স্বামী একদম সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু গত ১৮ মে হঠাৎ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো আমার কোলেই।

এরপর অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে যশোরের বেলাপোল দিয়ে বাংলাদেশে আসি। ভারত থেকে শুধু লাশের অর্ডার দেয়া ছিলো। পরে অনেক অনুনয় বিনয় করে আমরাও আসলাম লাশের সাথে।

বিয়ের এক বছর পার করতেই শুরু হয়েছিল যুদ্ধ। এই যুদ্ধে যদি এভাবেই বেঁচে থাকতো স্বামী তবুও সুখী থাকতেন বলে জানালেন বিলকিছ।

এখন তিনি কাকে নিয়ে থাকবেন? এভাবেই বিলাপ করে করে কথাগুলো বলছিলেন। তিনি বলেন যেহেতু আমরা ভারত থেকে এসেছি তাই প্রশাসনের কথামতো কোয়ারেন্টাইনে থাকছি। শনিবার পরীক্ষা করা হবে। আমরা সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলতে চাই না। যেভাবে প্রশাসন বলবেন আমরা সেটিই করবো। বিলিকিছ নেত্রকোনা সদর উপজেলার চল্লিশা ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের আলী উসমানের মেয়ে।

এই বিভাগের আরও সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সর্বশেষ সংবাদ

Recent Comments