পাহাড় আর হাওর বেষ্টিত এক জনদের নাম নেত্রকোনা। শিক্ষার দিক দিয়ে যেমন পিছিয়ে এ জেলা। তেমনি যোগাযোগের দিক দিয়েও পিছিয়ে থাকা জেলা এটি। ১০ উপজেলা নিয়ে গঠিত নেত্রকোনা পড়েছে একেবারে পাহাড়ি সীমান্ত এবং হাওর সীমান্তে। একদিকে স্বচ্ছ জররাশি। অন্যদিকে মাথার উপর দাঁড়ানো নানা ভঙ্গিমায় সুউচ্চ টিলা আর পাহড়।
প্রায় ২৫ লাখ জনগন অধ্যুশিত এই জেলা। যাদের জন্য উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্টান বলতে একমাত্র নেত্রকোনা সরকারী কলেজটিই ছিলো। দীর্ঘদিন ধরেই এই জেলার শিক্ষা প্রসারে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছিলো।
তারই ধারাবাহিকতায়, প্রধানমন্ত্রীর উন্নত বিশ্বের সাথে সমতা অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের অনগ্রসরমান জনগোষ্ঠীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সম্প্রসারণের জন্য ২০১৮ সালের ৯নং আইন এর মাধ্যমে “শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়” নেত্রকোনা জেলায় স্থাপিত হয়। আর এতে আপামর জনগোষ্ঠী উল্লাসে ফেটে পড়ে। এরপর থেকে এক এক করে শুরু হয় ভিসি নিয়োগ, ট্রেজারার, রেজিষ্টার, শিক্ষক নিয়োগসহ শিক্ষীর্থী ভর্তি ও ভূমি অধিগ্রহন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালেই ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ মঞ্জুরী কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে উন্মুক্ত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে তিনটি বিষয়ে (বাংলা, ইংরেজি ও অর্থনীতি) ৯০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ২০১৯ সনের ৩ মার্চ যাত্রা শুরু হয় শেহাবির। পরবর্তীতে ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে তিনটি অনুষদভূক্ত বাংলা ইংরেজি, অর্থনীতি ও কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্মাতক (সম্মান) শ্রেণিতে প্রতি বিভাগে ৩০ জন করে মোট ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়।
এদিকে শেহাবির শুরু থেকেই অবকাঠামো সহ সকল কার্যক্রম শুরু করে জেলা শহরের রাজুর বাজারে অবস্থিত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রতে (টিটিসি)। অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে টিটিসির ৪ তলা একটি ভবনেই বিগত দুবছর ধরে চলছে এর কার্যক্রম। মোট ২১০ জন শিক্ষার্থীর আবাসিক ব্যবস্থা সহ শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে।
অন্যদিকে ইতিমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৫ একর জায়গার জন্য বারাদ্দকৃত ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে সদর উপজেলার নেত্রকোনা মোহনগঞ্জ সড়কের পাশে সিংহের বাংলা ইউনিয়নের ৪৮৯ একর জায়গা ২৭৭ কোটি টাকায় অধিগ্রহন সম্পন্ন করে।
সুত্র আরো জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সর্বমোট বরাদ্দকৃত প্রকল্পের জন্য ২৬৩৭ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তারমধ্যে অধিগ্রহনকৃত ৪৯৮.৪৫ একর ভূমি ২৯৭.৯১ কোটি টাকা পরিশোধের মাধ্যমে শেহাবি কতৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর হয়েছে। জেলা প্রশাসনের (ভূমি) অফিসের সহায়তায় এ কার্যক্রম সম্পন্ন হয় গত ১১ জুন তারিখে যা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
এছাড়া অবকাঠামোগত অন্য কোন কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। তবে এরই মধ্যে প্রকল্প পরিচালক এক দফায় পরিবর্তন করে এ বছরের ৫ ফেব্রুয়ারী নতুন একজনকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দ্বায়িত্ব গ্রহণের চিঠি দেয়া হয়।
এদিকে তিনটি পদে তিনজন করে প্রভাষক এবং কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অস্থায়ী ভিত্তিতে একজন প্রভাষক নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কর্মকান্ড সম্পাদনের জন্য সর্বমোট ৫২ জন কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ সম্পন্ন হয়ে গেছে। তবে সহাকারী অধ্যাপক এবং অধ্যাপকের মোট ৮টি পদ এখনো শূন্য রয়েছে।
এ ব্যাপারে শেহাবির রেজিষ্টার কাজী নাসির উদ্দিন বলেন, একাধিকবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেও মঞ্জুরী কমিশনের শর্ত পূরণ করে আবেদনকারী পাওয়া যাচ্ছে না। চারটি বিষয়ে অধ্যাপক এবং সহকারী অধ্যাপক ৮ জনের পদ এ কারণে শূণ্য রয়েছে। তবে অন্যান্য সকল কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।
তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের সেরা আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হবে। আমরা এক কথায় বলতে পারি পদ্মা সেতুর পরেই হবে এর অবস্থান।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. রফিকউল্লাহ খান বলেন, মে মাস থেকেই শিক্ষা কার্যক্রম চলছে অনলাইনে। এছাড়াও সকল কার্যক্রম আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। এক একটা ১০ তলা বিল্ডিং হবে। যার জন্য দেখে শুনে মাটি পরীক্ষা করে ডিজাইন ভালো করে করতে হবে। সেকারণে একটু সময় লাগছে।
তিনি বলেন নেত্রকোনাবাসী অনেক ভাগ্যবান যে এর আগেও দেশের ৬টি বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো ডিপিপি পাস হয়নি। আমাদেরটা হয়ে গেছে। এটি এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে এটিতে কৃষি ইন্সিটিটিউট, মৎস্য গবেষণা ও কালাচারাল ইন্সিটউট হবে। কারণ নেত্রকোনা জেলাটিতে হাওর, পাহাড় সহ নানা জনগোষ্ঠীর বসবাস।
সেইসাথে এই জেলার কালচারাল দিকও রযেছে চমৎকার। এখানে শুধু দেশের নয় বিদেশের শিক্ষার্থীরাও পড়তে আসবে। এমন ভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, খুব দ্রুতই দেখা যাবে এর অবকাঠামোগত উন্নয়ন।