Friday, May 3, 2024
মূলপাতানেত্রকোনার সংবাদনেত্রকোনা সদর উপজেলাডাক্তারবিহীন চলছে নেত্রকোনা সমাজ কল্যাণ চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসা

ডাক্তারবিহীন চলছে নেত্রকোনা সমাজ কল্যাণ চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসা

নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়েই চলছে নেত্রকোনা সমাজ কল্যাণ সমিতির নামে পরিচালিত অসহায়দের চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র নামের নেত্রকোনা চক্ষু হাসপাতাল। দীর্ঘদিন ধরেই এমন অভিযোগ উঠলেও বিষয়টি আমলে নেয়নি পরিচালনা পরিষদ। পদাধিকারবলে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান। এদিকে সবকিছু ছাপিয়ে নতুন একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠনে একটি চক্র ওঠে পড়ে লেগেছে বলে পায়তারার অভিযোগও উঠেছে।

জানা গেছে, বর্তমান চক্ষু হাসপাতালটিতে কোন প্রশিক্ষিত ডাক্তার নার্স না থাকলেও চলছে গ্রাম থেকে আসা সাধারণ রোগীদের পরীক্ষা নিরীক্ষাসহ ব্যবস্থাপত্র দিয়ে ঔষধ বিক্রয়। আর এই সেবা দিচ্ছেন ১৯৯২/৯৪ সনে ময়মনসিংহ বিএনএসবি পরিচালিত হাসপাতালের নিয়োগপ্রাপ্ত আয়া নাজমুননাহার খানম মিনা ওরফে মিনা ডাক্তার। যিনি পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মতিয়র রহমান খানের ছোট বোন।

হাসপাতাল কমিটি, সমাজসেবা, স্থানীয় ও বয়োজ্যেষ্ঠদের তথ্য মতে জানা গেছে, এক সময় নেত্রকোনার ১০ উপজেলার অসহায় হতদরিদ্র মানুষের চক্ষু চিকিৎসায় ছিল না কোন হাসপাতাল। তৎকালীন সমাজসেবক অবনীকান্ত রায়ের প্রচেষ্টায় ময়মনসিংহের বিখ্যাত ডাক্তার কে জামান বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের সহযোগিতায় বাৎসরিক একবার চক্ষুশিবির করা হতো। ওই সময়ে অনেককেই বিনা চিকিৎসায় অন্ধত্ব নিয়েই মৃত্যুর পথে হাঁটতে হয়েছে।

এমতাবস্থায় পৌর শহরের সাতপাই নদীর পাড়ে ঝড়ে ভেঙ্গেপড়া একসময়ের জয়দুর্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়টির অরক্ষিত জায়গাতেই চোখের চিকিৎসায় ১৯৮৬ সনে শুরু করা হয় এই চক্ষু শিবির কার্যক্রম। তৎকালীন জেলা প্রশাসকের তত্বাবধানে পদাধিকার বলে সভাপতি পদ দিয়ে সার্বিক পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয় নেত্রকোনা সমাজ কল্যাণ সমিতিকে।

এতে সম্পৃক্ত করা হয় তৎকালীন সময়ের বিশিষ্ট চিকিৎসক প্রয়াত আব্দুল হামিদ খান, ব্যাবসায়ী ও কঁচি কাঁচা সংগঠক আলাউদ্দিন খান, আবদুল ওয়াহেদ, শিক্ষক সাইদুর রহমান, বেগম রোকেয়াসহ বেশ কজন বিদ্যুৎসাহী সমাজসেবীকে।

এরপর ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের পরিচালনায় ডাক্তার নার্স দারা পরিচালিত চক্ষু হাসপাতালটি। পরে হাসপাতালের কর্তৃত্ব নিয়ে পরিচালনা পরিষদের একছত্র আধিপত্য ও অনিয়মের কারণে বিএনএসবি কার্যক্রম বন্ধ করে প্রত্যাহার করে নেয়া হয় ডাক্তার সহ অপারেশনে ব্যবহৃত সকল মালামাল। কিন্তু তাদেরই নিয়োগকৃত আয়া বর্তমানে বনে গেছেন ডাক্তার। পরবর্তীতে ওয়ান ইলেভেনের সময় দেশের নানা অনিয়মের ঘটনা বেরিয়ে আসতে থাকলে চক্ষু হাসপাতালেও চলে সেনা অভিযান। বন্ধ হয়ে যায় কার্যক্রম। এরপর আবারো ডাক্তার আব্দুল হামিদ খানের আমন্ত্রণে ময়মনসিংহ বিএনএসবি ১লা জানুয়ারী ২০০৮ সনে পুনরায় সেবা চালু করলেও কর্তৃত্ব ও তৎকালীন ডাক্তারদের সাথে অসদচারণে পুনরায় ২০০৯ সনে বিএনএসবি ছেড়ে চলে যায়। এরপর থেকে ডাক্তার আসে যায়, ডাক্তার থাকে না এভাবেই চলে যাচ্ছে অদ্যবধি। যদিও গত ২০১৬/১৭ সনে পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক ও মিনা ডাক্তারের ভাই মতিউর রহমান খান জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে থেকে জেলা পরিষদের বিপুল পরিমান অর্থায়নে একটি দোতলা ভবন নির্মিত হয়। আনা হয় অপারেশনের আধুনিক যন্ত্রপাতি।

তারপরও কাঙ্খিত সেবা পেতে এসে হয়রানীর শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত ঠকে যাচ্ছেন গ্রাম থেকে আসা সাধারণ মানুষ। সাবেক আয়া দিয়েই প্রতিদিন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে ব্যবস্থাপত্র। বিক্রি করছে ঔষধ। প্রতারিত হচ্ছেন রোগীরা। আশপাশের স্থানীয়দেরকে ফ্রিতে দেখে আবার ঔষধও দেন ফ্রিতেই। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই এসকল অনিয়ম অব্যবস্থাপনায় হাসপাতালটি পরিচালিত হলেও এ নিয়ে কোনরকম মাথাব্যথা নেই পরিচালনা পরিষদের সভাপতি জেলা প্রশাসক কিংবা অন্যান্য সদস্যদের। বিষয়টি স্থানীয়দের চোখে পড়লেও অদৃশ্য কারণে কতৃপক্ষদের নজরে না আসার অভিযোগ স্থানীয়দের।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীদের ঢাক্তার ছাড়াই চিকিৎসা দিচ্ছে। আবার পরীক্ষাও করছে শতশত টাকায়। এরপর জোর করেই ঔষধ কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে তাদের।

এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের কো অর্ডিনেটর শরীফুজ্জাান পরাগের কাছে বর্তমান সেবাদানকারীর মিনা ডাক্তারের পদ জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা তো তখন আয়া পদেই তাকে নিয়োগ দিয়েছিলাম। পরে তাদের সাথে নানা কারণে আর থাকা হয়নি।

এ বিষয়ে পরিচালনা পর্যদের সম্পাদক জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মতিউর রহমানের সাথে কথা বলতে ফোন দিলেও রিসিভ করেন নি তিনি। তবে এ ব্যাপারে প্রতিষ্টাকালীন সদস্য বিশিষ্ট সমাজসেবক আব্দুল ওয়াহেদ জানান সিভিল সার্জনকে বললে সপ্তাহে একদিন ডাক্তার পাঠায় বলে জানি। এছাড়া এরাই দেখে অপারেশনের জন্য জমা হলে বাইরে থেকে ডাক্তার এনে অপারশেন করা হয়।

অন্যতম সদস্য বেগম রোকেয়া বলেন দেড় বছর আগে একবার সাধারণ সভায় ডেকেছিলো। পরে কি হচ্ছে না হচ্ছে জানায়না। তবে খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান। অন্য সদস্যরা জানান, ২০২১ সালে একটি সভার আহŸান করলেও তা শেষ না হয়েই পন্ড হয়ে যায়।

এদিকে নতুন পরিচালনা পর্ষদের গঠন সম্পর্কে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা আব্দুল­াহ আল মামুন জানান, পূর্বে এটির কোন গঠনতন্ত্রই ছিলোনা। তবে এখন আমাকে তত্ববধায়ক করে দেয়ার পর নতুন করে গঠনতন্ত্র করা হচ্ছে। গত এক বছর ধরে আপাতত কোন পরিচালনা পর্ষদ নাই বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে পদাধিকার বলে সভাপতি জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান জানান, আমি নেত্রকোনা আসার পর একটি সভায় গিয়েছিলাম মনে অছে। তবে মুলতবির ব্যপারে তিনি বলেন এখনতো মনে নেই, খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।

এই বিভাগের আরও সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সর্বশেষ সংবাদ

Recent Comments