সোহান আহমেদঃ
বৈধ কোন পন্থা না থকালেও সরকারি রাজস্ব ও প্রশাসননের চোখ ফাঁকি দিয়ে নেত্রকোনায় অবাধে ঢুকছে ভারতীয় চিনি, কম্বল, কয়লা, মাদকসহ বিভিন্ন পন্য সামগ্রী। প্রায় প্রতিদিনই সীমান্ত উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে অবৈধ মালামাল উদ্ধার সহ সংস্লিষ্ট চোরাকারবারিদের গ্রেফতার করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু রাষ্ট্রীয় পাহাড়ায় নিয়োজিত কিছু অসাদু কর্মচারির যুগসাজসে নিয়মিত হয়ে আসছে অবৈধ চোরাচালান। যদিও চোরাচালান রোধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মোঃ ফয়েজ আহমেদ।
চোকারবারী অনেকেই মালামালসহ আটক হলেও জব্দ তালিকায় থেকে যাচ্ছে গড়মিল। বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় আটককৃতদের কোর্টে সোপর্দ করার আগেই উধাও হয়ে যায় জব্দকৃত মালামালের অধিকাংশ। অভিযোগ উঠে ঘটনাস্থলেই নগদ অর্থের বিনিময়ে রফাদফার। চোরাকারবারীদের পারিবারিক অবস্থান দূর্বল হলে অর্থ আদায়ের পরও মালামালে গড়মিল দেখিয়েই আদালতে সোর্পদ করার অভিযোগ তুলছেন ভুক্তভোগীরা। সম্প্রতি এমন অভিযোগ উঠেছে নেত্রকোনার দূর্গাপুর থানার এ এস আই সুজন ভট্টাচার্জের বিরুদ্ধে।
ভূক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানাগেছে, গত ১২ জুলাই রাতে দূর্গাপুর থানাধীন শিমুলতলী এলাকা নব নির্মিত টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের সামনে থেকে ৪০ টি কম্বলসহ দূর্গাপুরের পূর্ব বাগিচা পাড়ার রতন চন্দ্র সরকারের ছেলে মানিক চন্দ্র ও একই গ্রামের ফজলু মিয়ার ছেলে সবুজ মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় মানিকের সাথে থাকা নগদ ১৬ হাজার ও পরে বিকাশের এই( ০১৬১২৯৭৭১৬৫) নাম্বারে আরো ১৪ হাজারসহ মোট ত্রিশ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন মানিক চন্দ্রের পিতা রতন চন্দ্র সরকার ও স্বজনরা। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত সবুজের স্বজনদের কাছে আরও ত্রিশ হাজার টাকা দাবি করলে সবুজের মা কুলসুমা বেগম বিভিন্ন পন্থায় ধার-দেনা করে ফজলু মিয়াসহ বেশকজনকে নিয়ে থানায় গিয়ে এ এস আই সুজুনকে টাকা দিলেও তাদের না ছেড়ে পরদিন ২০টি কম্বলসহ ১৩ জুলাই দূর্গাপুর আদালতে হাজির করা হয়। বিজ্ঞ আদালত তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
এর আগে টাকা দিলেও ছেলেকে না ছাড়ায় থানার গেইটে সবুজ মিয়ার পিতা ফজলু মিয়া এ এস আই সুজনের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পরেন। এক পর্যায়ে ফজলু মিয়াকেও ৫ জন পুলিশ সদস্য হেনস্তা করে একটি কক্ষে নিয়ে আটক রাখা হয় বলে অভিযোগ তুলেন ফজলু মিয়া। পরবর্তীতে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলামের হস্তক্ষেপে ফজলু মিয়াকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে বলেও নিশ্চিন করেন সিরাজুল ইসলাম। আটককৃত ও প্রত্যক্ষদর্শী স্বজনদের দাবি তারা ৪০টি ভারতীয় কম্বল নিয়ে ময়মনসিংহের উদ্যেশ্যে রওনা হলেও শিমুলতলী এলাকায় পুলিশ তাদের আটক করে। পরবর্তীতে মামলায় জব্দ তালিকায় কম্বলের সংখ্যা কম উল্লেখ থাকার বিষয়টি দেখতে পান স্বজনেরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, দূর্গাপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় জব্দ তালিকায় গড়মিল থাকার এমন বেশকিছু ঘটনার নজির রয়েছে। প্রচলিত রয়েছে পুলিশের উর্ধ্বত্বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার নামে বিভিন্ন স্থানে অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা ও মোটা অংকের মাশোহারা আদায়ের। এতে জন সাধারনের কাছে ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়াসহ পুলিশ বাহিনীর প্রতি আস্থা হারানোর শঙ্কা রয়েছে এমন মন্তব্য একাধিক স্থানীয় নাগরিকের।
তবে অভিযুক্ত এ এস আই সুজন ভট্টাচার্জ বলেন, ময়মনসিংহে বাড়ি হলেও গত মাস ছয়েক ধরে দূর্গাপুর থানায় কর্মরত রয়েছেন। কম্বল উধাও কিংবা আটকৃতদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি তিনি অবগত নন। তবে সবুজ মিয়ার পিতার সাথে বাকবিতন্ডায় জরিয়ে পড়ায় থানায় কিছুক্ষন বসিয়ে রাখার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত রয়েছেন কিনা? জানতে দূর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জের মোবাইল ফোনে বারবার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করেননি। তবে মানিক চন্দ্র ও সবুজ মিয়ার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে বলে অপর এক গনমাধ্যম কর্মীকে নিশ্চিত করেন ওসি শিবিরুল ইসলাম।
তবে জেলার সীমান্ত এলাকাগুলোতে চোরাচালান বন্ধে কঠোর নজরদারী রয়েছে। বিপুল পরিমান মাদক ও ভারতী পণ্যসামগ্রী সহ চোরা কারবারিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে চেকপোষ্টের মাধ্যমে প্রতিরোধ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এছাড়াও জনসেবায় জেলা পুলিশের বিভিন্ন কার্যক্রমের সফলতায় এরইমধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে শ্রেষ্ট জেলা হিসেবে পুরুষ্কৃত হয়েছে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদ।