সোহান আহমেদ:
নেত্রকোনা সদর উপজেলার চল্লিশা ইউনিয়নে মগড়া নদীর একটি অংশে বাঁশের চাটাই দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে অবৈধভাবে মাছ শিকার করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র।
ফলে প্রাকৃতিক মাছের অবাধ বিচরণ ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি ছোট আকৃতির পোনাসহ সব ধরনের মাছ নিধনের ফলে বিলুপ্ত হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। একেবারেই বন্ধ হয়ে পড়েছে ছোট বড় সব ধরনের নৌকা চলাচল।
এমতাবস্থার খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে সাময়িকভাবে শুধুমাত্র বাঁশের উপরের অংশ কেটে দেয়া হয়েছে।যদিও এতে মাছ নিধন বন্ধ কিংবা স্বাভাবিক বিচরণ সম্ভব হচ্ছে না বলছেন স্থানীয়রা।
এলাকাবাসী বলছেন, মূলত বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ায় নামে মাত্র অভিযান দেখিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বাঁধের বাঁশ গুলো উপর থেকে কেটে দেয়া হয়েছে।
সোমবার অভিযান পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে বাঁশ চাটাই নীচ থেকে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এদিকে মাছ শিকারের সব সরঞ্জামই পানির নিচে থেকে যাওয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
তারা জানান দীর্ঘদিন ধরে সদর উপজেলার খুব কাছাকাছি জায়গায় এই অবৈধ মৎস্য নিধন চললেও স্থানীয় মৎস্য অধিদপ্তর এ ব্যাপারে নেয়নি কোন পদক্ষেপ। অবৈধ মাছ নিধনে ভাগ বাটোয়ারা পাওয়ায় কোনরকম পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে এমন জনশ্রুতি রয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।
সোমবার বিকেলে সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, চল্লিশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহর আলীর ছত্র ছায়ায় আইনুল, লাক মিয়াসহ বেশ কয়েকজন নদীর ৫শত মিটার এলাকা জুড়ে বাঁশ ও চাটাই দিয়ে বাঁধ তৈরি করেছেন। এতে করে উজান থেকে নেমে আসা পানি ও মাছের অবাধ চলাচল বিঘ্নিত করে অবৈধ পন্থায় নিধন করা হচ্ছে পোনামাছ সহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় প্রজাতির মাছ।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন অর্ধলক্ষ টাকার মাছ বিক্রি করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে করে মাছ শিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পৌর শহরে বসবাসরত কয়েক শতাধিক নিম্নবিত্ত পেশাজীবি জেলে পরিবার।
এ ব্যাপারে আগে থেকে জানলেও তেমন কিছুই করতে পারেননি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চল্লিশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুল মজিদ। তিনি জানান, ভোটের রাজনীতি করায় বিষয়টি জেনেও বাধা দেননি।
তবে চলন্ত নদীতে বাঁধ দেয়া পুরোটাই অবৈধ স্বীকার করে বাঁধ খুলে দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানান। তবে বাঁধ সৃষ্টিকারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহর আলী বলেন, আগে বাধা দেয়া হয়নি সেজন্য এভাবেই মাছ শিকার করা হয়েছে।এখন উপজেলা প্রশাসন জানতে পেরে বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার জানান, বিষয়টি শোনা মাত্রই ঘটনা স্থলে গিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের সতর্ক করা হয়েছে। অবৈধ মাছ শিকার বন্ধে বাঁশ গুলো কেটে দেয়া হয়েছে। প্রচন্ড স্রোত থাকায় নিচের বাঁশ গুলো খোলা সম্ভব হয়নি।
তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যারা এগুলো লাগিয়েছেন তাদের মাধ্যমেই তুলে নেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। জেলা মৎস্য অধিদপ্তরকে মনিটরিং রতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদিকে অপর একটি সূত্রে জানা যায়, রবিবার জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সভাপতি জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ নদীতে অবৈধ বাঁধ দেয়ার খবর পেয়েই উপজেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।