Saturday, November 2, 2024
মূলপাতানেত্রকোনার সংবাদমোহনগঞ্জ উপজেলাএস এস সি পরীক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম: তিনদিন পর উল্টো লুটপাটের মামলা

এস এস সি পরীক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম: তিনদিন পর উল্টো লুটপাটের মামলা

ছাগলে ক্ষেত খাওয়াকে কেন্দ্র করে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে দা দিয়ে জখম করায় প্রতিবেশি বখাটে মুন্নার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করে বিপাকে মেয়ের বাবা। ঘটনার তিনদিন পর আসামীকেই স্বাক্ষী করে ভিকটিমসহ পরিবারের বিরুদ্ধে হামলা লুটপাটের অভিযোগ সাজিয়ে আদালতে উল্টো মামলা দায়ের করেছে আসামীর বাবা। বাদী পুরুষ হলেও আমলী আদালতে করা মামলার এজাহারে রয়েছে নারীর ভাষ্য। এদিকে চলতি এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি (টেষ্ট) পরীক্ষা দিতে পারছেনা আহত তাছলিমা। অন্যদিকে হত্যার হুমকি সহ ভয়ভীতি দেখাচ্ছে পরিবারটিকে। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আর একটু হলেই চোখটা নষ্ট হয়ে যেতো মোহনগঞ্জ উপজেলার রামজীবনপুর গ্রামের শফিকুল ইসলামের মেয়ে তাছলিমা আক্তারের। চলতি টেস্ট পরীক্ষার একটিতে অংশ নিয়ে বাকি পরীক্ষার দিন কাটছে হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই। গত করোনায় দুবছর পিছিয়ে এবার ওই গ্রামের খান বাহাদুর বির উদ্দিন খান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রস্তুতি দিচ্ছিল তাছলিমা।

কিন্তু বৃহস্পতিবার (১৯ মে) প্রথম পরীক্ষা দেয়ার পর শুক্রবার (২০ মে) পাশের বাড়ির সারোয়ার জাহান (তাইজ্জুত) মিয়ার জমিতে তাদের একটি ছাগল চলে যায়। ছাগলটিকে জমির মালিকের ছেলে মুন্না মিয়া ধরে নেয় তাদের বাড়িতে। এটি বাচ্চা জন্ম দিলে মুন্নার মায়ের খবরেই আনতে যায় তাছলিমা। আর সেই আনতে যাওয়াই কাল হলো মেয়েটির। ছাগল ও বাচ্চা নিয়ে আসার পথে মুন্নার সাথে বাকবিতন্ডার জেরে মুন্না মারধরসহ দা দিয়ে কুপ দেয় কপালে।

ভুক্তভোগীর বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি নিরীহ মানুষ। আমার চার মেয়ে একটা ছোট ছেলে। মাত্র আট কাঠা জমি ছিলো। এই জমি করেছি। কিন্তু ধান কাটার শ্রমিক না থাকায় নিজেই কাটি। সারাদিন হাওরে থাকি ঝগড়া করবো কখন। ওইদিনও ধান কাটতেছিলাম। আমার ছোট মেয়েটা কান্না করে দৌড়ে গিয়ে বললে আমি ছূটে আসি।

এই ঘটনায় মামলা দিয়েছি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে। কিন্তু আমার এই ঘটনা নিয়ে আসামীদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে পুলিশ বাড়িতে থাকা স্বত্তেও কোন আসামি ধরতে পারে না। ফোন দিয়ে বললে বলে বৃষ্টির জন্য যাওয়া যায় না।

তবে এএসপি স্যার গিয়ে আমাকে বলে এসেছেন আমি যেনো বিশ্বাস রাখি। দারোগা পর্যন্তই বিচার না। আইনের হাত অনেক লম্বা। তারা সুষ্ঠু বিচার করবেন। আমি যেনো টাকায় মীমাংসা না হই এটাও তিনি বলেছেন।

তাছলিমাকে কুপ দিয়ে জখম করার ঘটনায় মেয়েকে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শনিবার (২১) থানায় মামলা দায়ের করেন তাছলিমার বাবা। কিন্তু পুলিশের গড়িমসিতে দুইদিনেও আসামী আটক হয়নি। উল্টো সোমবার (২৩ মে) আসামরিা হাজিরা দিয়েই আদালতে লুটপাট ও ডাকাতি এবং হামলার মামলা করেছে তাছলিমাসহ পরিবারের বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত মুন্নার মা মোছাঃ আশিক নুর ও ভাবী জান্নাতের দাবি ছাগল আনতে গিয়েই তাছলিমা বকাঝকাসহ দা নিয়ে মারধর করেছে তাদেরকে। এ সময় মুন্না ফেরানোর জন্য গেলে কপালে লাগে। দুদিন ভেবে পুলিশ চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন জনের পরামর্শে তারা পরে মামলাটি দায়ের করেছেন। তারা আরও বলেন মুন্নাও একজন ছাত্র।

এদিকে গ্রামবাসী আসামীদের দাপটে মুখ না খুললেও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তবে সহজ সরল তাছলিমাদের পরিবারের অসহায় লোকজনদের ভয় সঠিক বিচার পাবে কিনা।

অন্যদিকে আসামী ধরতে পুলিশের তালবাহানার কথা জানিয়ে নারী নির্যাতন প্রতিরোধকারী সংগঠনের নেতা সাইফুল আরিফ জুয়েল বলেছেন মেয়েটির পরিবারকে হয়রানী করতে উল্টো মামলা সাজিয়েছে আসামীপক্ষ।
তাও আবার আসামীকেই স্বাক্ষী করে নারীর ভাষ্য দিয়ে পুরুষ বাদী হয়েছেন। তারা এই ঘটনার সঠিক বিচার দাবী করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান।

খান বাহাদুর কবির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাম মৌলা জানান, মেয়েটি তাদের স্কুলের শিক্ষার্থী হওয়ায় খবর পেয়ে তারা দেখে এসেছেন। এস এসসি পরীক্ষার জন্য পড়ার বেঘাত ঘটেছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এটি প্রস্তুতি পরীক্ষা ছিলো। অবশ্যই সে বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। সে ব্যবস্থা করা হবে।
মেয়েটি যাতে ন্যায় বিচার পায় সেজন্য তদন্ত করা হচ্ছে এবং আসামী ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান মোহনগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাশেদুল ইসলাম। মেয়েটির বিষয়েও খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। তবে আসামীদের আদালতে করার মামলার ব্যাপারে তিনি জানান থানায় কোন কাগজ আসেনি।

এই বিভাগের আরও সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সর্বশেষ সংবাদ

Recent Comments