নেত্রকোনায় কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করতে প্রশাসন পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে চলছে টহল। এই লকডাউন বাস্তবায়নে সড়কের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পুলিশের কঠোর অবস্থান থাকলেও অহেতুক ঘুরাঘুরি করছে মানুষ। পাওনাদার থেকে বাঁচতে শহরে এসে ঘুরছেন অনেকেই। গতকাল বৃহস্পতিবার শহর জুড়ে ঢিলেঢালা লকডাউন থাকলে শুক্রবার সকাল থেকে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবির টহল জোরালো দেখা গেছে। আজ শুক্রবার বন্ধের দিনেও নেত্রকোনা শহরের ছোট বাজার, শহীদ মিনার মোড় ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র।
পথে অহেতুক বের হওয়া অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা কেউ কেউ ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছেন। কেউ রোজগারের আশায় আবার পালিয়ে বাঁচতে। কথা আটপাড়া উপজেলার স্বরমুশিয়ে ইউনিয়নের শফিকুলের সাথে। তিনি ঋণ নিয়ে একটি সিএনজি কিনেছিলেন। গত বছর ধরেই লকডাউনে পরিশোধ করতে পারছেন না কিস্তি। সকাল হলেও পাওনাদার এসে বাড়িতে হাজির হন তাগাদা দিতে। গত বছর করোনায় ৫০ হাজার টাকা ঋণ করেন তিনি। এই টাকা এখন সুদে আসলে হয়েছে আড়াই লাখ টাকায়।
প্রায় প্রতিদিন পাওনাদার বাড়িতে খোঁজ করেন। দিয়ে যান তাগদা। কিন্তু সড়কে চলছে না গাড়ি। টাকা দিবো কিভাবে? সেখান থেকে বাঁচাতেই প্রতিদিন লক ডাউনেও শহরে ঘুরে বেড়ান তিনি।আবার রাত হলে ঘুমানোর আগে বাড়ি ফেরেন। ফজরের আযান হওয়ার সাথে সাথেই শফিকুলের বাড়ি ছাড়তে ঘুম ভাঙ্গে এখন। এদিকে এমন মানুষ ছাড়াও শহরে রয়েছে বাইরে বের হওয়ার আরও নানা কারণ। কেউ কেউ ডাক্তার বা বাজারের জন্য বের হচ্ছেন বলে জানান। কেউ কেউ রুটি রুজির জন্য রিক্সা আটকে দেয়ার পরও বাইরে আসছেন। আবার কেউ বা খবর পৌঁছে দেয়ার জন্য সাইকেল চালিয়ে জেলা থেকে উপজেলা এমনকি গ্রামে যাচ্ছেন। যেমন খবর পৌঁছে দিতে পত্রিকার হকাররা আগে পত্রিকা বিক্রি করতে পারতো। এখন তাও পারছেন না।
লক ডাউনে অর্ধেকে নেমে এসেছে তাদের পেপার বিক্রি। জীবন চলছে কোন রকম। করোনার মতো মহামারি জেনেও ঝুঁকি নিয়ে বের হচ্ছেন তারা। এদিকে ট্রাফিক পুলিশের সাথে দিনভর সড়কে স্কাউটের কোমলমতি শিশুরাও করছেন সচেতন। কিন্তু তারাও বলছেন দিন মজুরদের কষ্টের বিষয়ে। আটকে রাখার পাশাপাশি তাদেরকে পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ করতে অনুরোধ করছে তারাও। এদিকে পুলিশরাও সকাল থেকেই আটকাচ্ছেন আবার মানবিক ভাবে বুঝিয়ে ফেরত পাঠাচ্ছেন বাইরে আসা মানুষদের।
অন্যদিকে জেলা প্রশাসক কাজি মো আবদুর রহমান, খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছেন বাইরে কাজ করতে আসা দিন মজুরদের। পুলিশ সুপার মো আকবর আলী মুনসী তিনিও বিভিন্ন ঘাটে ঘাটে নৌকা শ্রমিকদের হাতে অফিসার ইনচার্জ দিয়ে পৌঁছাচ্ছেন খাদ্য সামগ্রী। তারপরও পর্যাপ্ত মানুষ বাকী রয়ে গেছে এই খাদ্য উপহারের বাইরে। কিন্তু কাজের সন্ধানেও যেতে পারছেনা তারা।