দারিদ্রতা আর কুসংস্কারকে জয় করে কল সিন্দুরের নাম এখন মুখে মুখে ছড়িয়ে দিলো সাবিনারা। দারিদ্রতার কষাঘাত রুখতে পারেনি। দমাতে পারেনি গ্রামীণ কুসংস্কার। পায়ের যাদুতে সে সকল বঞ্চনাকে পেছনে ফেলে সংবর্ধনায় ভাসছে এক সময়ের অজপাড়াগায়ের সাফ বিজয়ী কন্যারা।
নেত্রকোনা জেলার পাশ্ববতী সীমান্ত উপজেলা ধৌবাউড়া। পাশের ময়মনসিংহ জেলার একটি আদিবাসী অধ্যুসিত পাহাড়ী উপজেলা। সেখানকার কলসিন্দুর একটি ইউনিয়ন এবং গ্রামের নাম।
এ গ্রামের ছোট ছোট কন্যারা শুরু করেছিলো ২০১১ সনে বঙ্গমাতা ফুটবল টূর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে ফুটবলে যাত্রা। এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের।
তবে অবর্ননীয় নানা কষ্ট বঞ্চনা সইতে হয়েছে। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে এখন দেশের নাম উজ্জল করে ফিরে এসেছে গ্রামে। গ্রামের নামটিও মানুষের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে আজ গর্বের সাথে।
আজ গ্রাম জুরে চলছে আনন্দের জোয়ার। সারাদেশের মানুষের মুখে মুখে সেই পাহাড়ী গ্রাম কলসিন্দুর। দূর দূরান্ত থেকে ওই গ্রাম দেখতে ভীড় করছেন অনেক মানুষ।
কলসিন্দুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আট কন্যা সানজিদা, মারিয়া, শিউলি আজিম, মারজিয়া আক্তার, শামসুন্নাহার, তহুরা, সাজেদা ও শামসুন্নাহার জুনিয়র। তাদের সবাই কলসিন্দুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের দুজন রয়েছেন কলেজ ছাত্রী। এখন নেই তেমন অভাব। সবাই এখন পরিবারের স্বচ্চলতা ফিরিয়ে আনার এক অন্যন্য মাধ্যম।
গত ১৯ সেপ্টেম্বরের পর থেকে এই আট তারকার জন্য পুরো দেশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগ যেনো ফুলে ফুলে সজ্জিত। গত দুদিন ধরে ময়মনসিংহ বাসীর সংবর্ধনায় সিক্ত হচ্ছে কলসিন্দুরের মেয়েরা।
শুক্রবার বাড়ি যাচ্ছে ফুলের শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়ে। সকাল থেকে পথে পথে গণসংবধর্নায় মাথা উঁচু করে বিজয়ের হাসিতে নিজ গ্রামের পথে। যেতে যেতে হয়তো রাত হবে। তবুও আনন্দের যেনো সীমা নেই। সড়কের মাঝেই যেনো অনাবিল আনন্দে ভাসছে তারা।
বিকেলে কথা হয় সংবর্ধিত ফুটবল কন্যাদের সহযাত্রী ধৌবাউড়ার এক সংবাদকর্মী আবুল হাশেমের সাথে। তিনি জানান, বিকালে পথে ফুলবাড়িয়া উপজেলায় সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে। এমনি করে ময়মনসিংহ থেকে শুরু করে বাড়ি পর্যন্ত গিয়ে শেষ হবে। কিন্তু গ্রামের মানুষের আনন্দ শেষ হবে না। তারাও বসে আছে পছন্দের খাবার সহ নানা আয়োজন নিয়ে। তিনি বলেন পুরো বিভাগের মানুষ এখন গর্বিত ভাবেন নিজেদের।
এটা দেখে খেলোয়াড়রা আরও অনুপ্রাণিত হচ্ছে। কলসিন্দুর গ্রামটি এখন ফুববল কন্যা নগরী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। কলসিন্দুর প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয়ের মাঠ যেনো এখন ফুটবলের মাঠ। প্রায় প্রতিটি মানুষ চায় তাদের সন্তানরা ফুটবল খেলুক।
তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়মনসিংহে সংবর্ধনায় আসার সময় সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে নগরবাসী তাদের অভিবাদন জানান। শোভাযাত্রাসহ সার্কিট হাউস বৈশাখী মঞ্চে আনা হয়। এ সময় স্থানীয় নারী খেলোয়াড়রা ব্যাপক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।