সরকার হাওরাঞ্চলে কৃষকদের সেচ সুবিধায় নদী খনন করছে কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে। সেই সমেয় বিলের ইজারাদাররা মেশিন দিয়ে পানি সেচে নদীর মাছ ধরছে বেআইনীভাবে। এতে করে পুরো মওসুমে নদীতে পানি থাকবে না বলে দাবী কৃষকদের। ফলে হাজার হাজার একর জমির ধান নষ্ট হয়ে আপামর কৃষক ক্ষত্রিগস্থ হবেন বলে জানান, জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার মাঘান সিয়াধার ইউনিয়নের ডিঙ্গাপোতা হাওরের মল্লিকপুর ও বেঠাখালি সহ বেশ কয়েক গ্রামের কৃষক।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত জানান, ডিঙ্গাপোতা হাওরের মাঝে সাপমারা নদীতে পানি চলাচলের জন্য সরকার ৮ দশমিক ১ কিমি খনন করতে ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিযেছে। যাতে হাওলাঞ্চলের কৃষকদের একমাত্র বোরো ফসল ঘরে তুলতে পারে। ধানে উদ্বৃত্ব হাওরের ফসল রক্ষায় দিনরাত খনন কাজে তদারকি করছে কর্মচারীরা। সেখানে কোন অবস্থাতেই নদীর পানি শুকাতে দেয়া হবে না। আমরা এটির ব্যবস্থা নিবো।
জানা গেছে, হাওরের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা সাপমরা নদী খনন কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আদর্শনগর থেকে বরান্তর পর্যন্ত খনন কাজ করছেই যাতে হাওরাঞ্চলের একমাত্র বোরো ফসল রক্ষায় সেচ কার্য চলে।
কিন্তু প্রভাবশালী বৈঠাখালি বিল ইজারাদার অজিত দাস গংরা বিলের নাম করে নদীর মাছ ধরতে জাল দিয়ে নদীতে বাঁধ আটকে মেশিন বসিয়ে নদীর পানি সেচে নিচ্ছেন।
এতে করে খরায় পড়বে হাজার হাজার একর ফসলি জমি। পৌষ মাঘ চারা রোপন শেষ হয়েছে। মাত্র ফালগুন শুরু হয়েছে। চৈত্র মাস পর্যন্ত জমিতে প্রতিদিন সেচ দিতে হবে সকাল বিকাল। বৈশাখে কাটবে ধান। এরমধ্যে সব পানি ফালগুনের শুরুতেই শুকিয়ে ফেললে কৃষকরা মাঠে মারা যাবে।
এ নিয়ে ইজারাদার পাশর্^বতী করাচারপুর গ্রামের অজিত দাসের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমার সাথে পার্টনার মোহনগঞ্জ আওয়ামীলীগের প্রয়াত নেতা আব্দুল কুদ্দুস আজাদের স্ত্রী জোসনা আজাদ রয়েছেন। উনার পক্ষে মেয়ের জামাই প্রতিনিধি হিসেবে করিম মিয়াও আছেন। আমরা বাংলা ২০২৩ সনে ১১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে ডাক এনেছি। গত ৫ বছরে আমাদের আসল টাকাই ওঠে নাই।
নদী ইজারার নিয়ম না থাকলেও কিভাবে সেখান থেকে সেচ দিয়ে মাছ ধরা যায় এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই নদীটা বিলের মধ্যেই পড়েছে। নদী নিয়েই বিল। যুগ যুগ ধরেই এভাবে ফিসিং করে আসছে সবাই। আমরা আরো তেল খরচ করে কৃষকদের জমিতে পানি দিচ্ছি। এতে তারা অখুশি। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন আগামী মঙ্গল বুধবারে নেত্রকোনা এসেই আপনার সাথে দেখা করবো।
কৃষক সুধাংশু সরকার, অজয় সরকার, অনুপ তালুকদার, রনি তালুকদার, গৌতম তালুকদারসহ অন্যরা জানান, পানি তো এখন সেচে ফেলছে। পরের দুইমাস এই পানি জমিতে থাকবে কি করে। খড়ায় সকালের টা বিকালে থাকে না। তারা জানান, মানুষের কাছ থেকে পত্তন (বর্গা) নিয়ে যারা রোপন করেছে এদের কি উপায় হবে। আমরা না হয় না খেয়ে মরবো না। শতাধিক কৃষক আছে বিভিন্ন পরিমাণ জমি বর্গা নিয়ে চাষ করে। একমাত্র হওরের জীবিকা এই ফসল।
একটি সূত্র জানায়, হাওরের একমাত্র ফসল ধানের পাশাপাশি মাছে উদ্বৃত্ত। প্রতি বছরর এক একটি বিল থেকে কয়েক কোটি টাকার মাছ বিক্রি করেন বিভিন্ন প্রভাবশালীরা নামে মাত্র কিছু রাজস্ব দিয়ে। এর ভাগ দেন সকল দপ্তরে। যে কারনে প্রকৃত জেলেরা উন্মক্ত জলাশয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহের কথা থাকলেও তারা ইজারাদারদেরকে মাছ ধরে দেয়ার শ্রমিকের কাজ করেন। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান নদী শুকিয়ে সেচ অসুবিধা করতে দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছি।