সারাদেশের ন্যায় নেত্রকোনার জেলার ১০ উপজেলাতেই প্রথমদিনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিশুরা বই পেতে আনন্দে আত্মহারা। মাধ্যমিক বা সমমানের সম্পূর্ন তথ্য পাওয়া গেলেও প্রাথমিকের পুরোটা পাওয়া যায়নি। যারা প্রথম দিনে বই পেয়েছে সেসকল শিশুদের মনে কিছুটা আনন্দ লক্ষ্য করা গেছে। তবে যারা একেবারেই পায়নি তাদের মনে জমেছে অনেক কষ্ট।
জেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক এবং সমমানের ৪০৬ টি প্রতিষ্ঠানের ২ লক্ষ ২৩ হাজার ২৩৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য বইয়ের চাহিদা রযেছে ২৯ লাখ ৮ হাজার ৮০৫ টি বইয়ের। এর মধ্যে বই এসেছে ২০ লক্ষ ৭৮ হাজার ৮৩৬টি। প্রতি শিক্ষার্থীকে সকল সাবজেক্ট না দিতে পারলেও বেশির ভাগ বা অর্ধেক দিতে পারছে। মাধ্যমিকে ২৭১ টি প্রতিষ্ঠানে ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৬ জনের বইয়ের চাহিদা রয়েছে ২১ লাখ ৩৬ হাজার ৪৫০ টি। তারমধ্যে এসেছে ১৫ লাখ ১৫ লাখ ৯২ হাজার ৫৫৯ টি বই। বাকী রয়েছে ৬ হাজারেরও বেশি।
এছাড়া ৮৯ টি মাদ্রাসায় (দাখিল) ২৬ হাজার ৪৮৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। স্বতন্ত্র এবতেদায়ীতে ৪০ হাজার ৩৪ জন এবং ৪৭ টি ভোকেশনালে ৬ হাজার ৬৬০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যমতে জানা গেছে, ১৩১৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থীর জন্য বইয়ের চাহিদা ১৬ লাখের বেশি। কিন্তু বছরের প্রথম দিনে দেয়ার মতো কি পরিমাণ বই এসেছে তার সঠিক তথ্য জানাতে পারেননি কেউ।
এদিকে উৎসব মুখর পরিবেশে রবিবার সকাল থেকেই বই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জনা খান মজলিশ। শহরের সাতপাই এলাকায় মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোমলমতি শিশুদের হাতে বই তুলে দিয়ে উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এছাড়াও মোক্তারপাড়ায় আঞ্জুমান সরকারি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে সমাবেশ করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হয়।
অন্যদিকে বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় কোন কোন শ্রেণিতে একটিও বই দেয়া হয়নি। খালিয়াজুরী উপজেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে একটি করে বইও দেয়া হয়। মোহনগঞ্জ উপজেলার মাইলোরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী টুইটি চৌধুরী একটি বইও না পাওয়ায় তার কান্না শুরু হয়। অভিভাবক নিক্সন চৌধুরী জানান, তার কন্যার বই না পেয়ে তিনিও হতাশ।
এদিকে মোহনগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিশ^জিৎ সাহা জানান, পুরো উপজেলায় তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির কোন বইই তারা পাননি। প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেনির আংশিক বই পাওয়া গেছে। একটি দুটি করে দেয়া হয়েছে।
বারহাট্টা উপজেলার কেশবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. নুরুল হক জানান, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষাথীদের প্রতি ক্লাসের ৬ জনকে একটি করে বই দেয়া হয়েছে। বাকিগুলো দিতে পারিনি।
বারহাট্টা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্তকর্তা বিনয় চন্দ্র শর্মা জানান, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম কোন বই পাইনি। প্রথম দ্বিতীয়তে আংশিক দিচ্ছি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাহমিনা খাতুন জানান, বই পাইপলাইনে রয়েছে। দ্রুতই সবগুলো পাওয়া যাবে। দুএকদিনের মধ্যে জানাতে পারবো কতগুলো চাহিদা কতগুলো পেয়েছি।
জেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা মো. আব্দুল গফুর জানান, যেগুলো তারা পেয়েছেন সেগুলো পর্যায়ক্রমে দেয়া হচ্ছে। মোট চাহিদার ৮ লক্ষ ২৯ হাজার ৯৭০ টি বই বাকী রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে নেত্রকোনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি শিক্ষা) অনিমেষ সোম জানান, বই আসতেছে এই জন্যে একুরেট তথ্যটা বলা যাচ্ছে না। তবে বেশিরভাগই আসছে বলে জানান তিনি।