সোহান আহমেদ:
নেত্রকোনার পূর্বধলায় ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ (৪৫)কে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত ৪জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৪। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিহত আব্দুল আজিজে ছেলে বিপ্লব (১৯) কে গ্রেপ্তারের পর বুধবার বিকেলে ময়মনসিংহের গৌরিপুর এলাকা থেকে বিজয় কর্মকার (১৯), মোঃ তরিকুল ইসলাম (১৮) ও মোঃ আজহার মিয়াকে গ্রেফতার করে র্যাব-১৪।
গ্রেপ্তারকৃত বিজয় কর্মকার ময়মনসিংহের গৌরিপুর উপজেলাধীন মইলাকান্দা গ্রামের শংকর কর্মকার’র ছেলে, মোঃ আজহার মিয়া একই গ্রামের তারা মিয়ার ছেলে, তরিকুল ইসলাম পূর্বধলা উপজেলার শ্যামগঞ্জস্থ এমদাদুল হকের ছেলে ও বিপ্লব উপজেলার মানিকদি গ্রামের খুন হওয়া আব্দুল আজিজের ছেলে।
জানা গেছে, গত (১ সেপ্টেম্বর) বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার গোহালাকান্দা ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। আব্দুল আজিজ ওই ইউনিয়নের মানিকদি গ্রামের মৃত তালেব হোসেনের ছেলে। তিনি স্থানীয় শ্যামগঞ্জ বাজারে পোল্টি খাদ্যের ব্যবসা করতেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নেত্রকোনা জেলা পুলিশ জানায়, পূর্বধলার শ্যামগঞ্জ বাজারে তার “আব্দুল আজিজ ট্রেডার্স” নামীয় একটি পোল্ট্রি ফিডের দোকানে প্রতিদিন ছেলে বিপ্লবকে নিয়ে আব্দুল অজিজ দোকানে যান এবং রাত আনুমান ৯টার সময় ছেলেসহ বাড়িতে ফিরেন। ঘটনার দিন সারাদিন মালামাল বিক্রি শেষে রাত অনুমান ৯টার সময় ছেলেসহ বাড়ী ফিরেন। বাড়িতে এসে আব্দুল আজিজ বাথরুমে যান এবং বাথরুম থেকে বের হয়ে ছেলে বিপ্লবের খোঁজ নেন। বিপ্লব ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার তথ্যে ছেলের খোঁজে বের হন এবং ছেলের মোবাইলে ফোন দেন।
মোবাইল ফোনে আব্দুল আজিজ জানতে পারেন শ্যামগঞ্জ বাজারের সন্নিকটে কুতুবপুর সাকিনস্থ শ্মশানঘাট নামক স্থানে বিপ্লবের অবস্থান। এ কথা শোনে আব্দুল আজিজ সেখানে গমন করেন। তিনি ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর কিছু বুঝে ওঠার আগেই পরিকল্পনা মতো ছেলে বিপ্লব এবং আজাহার পেছন দিক থেকে তার হাত ধরে এবং অন্যরা গলায় গামছা পেঁচিয়ে দুই দিক থেকে টেনে ধরে। পরে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে ভিকটিমের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ফেলে রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। যাওয়ার সময় পাশের একটি পুকুরে হত্যার কাজে ব্যবহৃত চাইনিজ কুড়াল দুটি ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর বিপ্লব তার ভগ্নিপতি (বড় বোনের জামাতা) সোহেল মিয়াকে ফোন করে জানান কে বা কারা তার বাবাকে কুপিয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। এ সংবাদের প্রেক্ষিতে বিপ্লবসহ তাদের নিকটাত্মীয়-স্বজন ঘটনাস্থলে গিয়ে আব্দুল আজিজের মাথায় ও কানের পাশে কুপানো অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাৎক্ষণিক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুল অজিজকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে র্যাব জানায়, নিহত ব্যবসায়ীর ছেলে বিপ্লব মাদকাসক্ত। তাই বাবা তাকে তিরস্কার ও গালমন্দ করতেন বলেই তিনি বাবাকে খুনের পরিকল্পনা করেন। আসামিদের পূর্বধলা থানায় সোপর্দ করা হচ্ছে বলেও জানান র্যাবের অধিনায়ক। এর আগে ব্যবসায়ীর স্ত্রী বকুল বেগম স্বামীকে খুনের ঘটনায় পূর্বধলা থানায় একটি মামলা করেছিলেন।
নেত্রকোনার নবাগত পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় অতি অল্প সময়ে ক্লুলেস এ খুনের রহস্য উন্মোচিত হওয়ায় জনমনে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জল হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।