দেশ বরেণ্য কথাসাহিত্যিক মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বাংলা একাডেমী এবং একুশে পুরস্কারপ্রাপ্ত খালেকদাদ চৌধুরী’র ৩৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ শনিবার রাত আটটায় নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়া বকুলতলা চত্বরে সাধারণ গ্রন্থাগার পাঠকক্ষে আলোচনার আয়োজন করেছে সাধারণ গ্রন্থাগার।
এতে জেলা প্রশাসক কাজি মোঃ আবদুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু।
এছাড়াও বরেণ্য এই কথাশিল্পীর জীবন কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন তার ছেলে মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী, অধ্যাপক ননী গোপাল সরকার, স্মরণানুষ্টানের আহবায়ক প্রবীণ সাংবাদিক শ্যামলেন্দু পাল, আবু আব্বাস ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক নাজমুল কবীর সরকার ও কবি সোহরাব উদ্দিন আকন্দ প্রমুখ। এসময় বক্তারা খালেকদাদ চৌধুরীর কর্মময় জীবনের উদাহরণ তুলে ধরে নতুন প্রজন্মকে সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী হতে উৎসাহিত করেন।
বক্তারা আরো বলেন, তৎকালীন সময়ে পূর্ব ময়মনসিংহের জ্ঞান ও ঐতিহ্যে বাংলার সারস্বত সমাজকে যাঁরা আলোকিত করেছেন সেইসব ধীমান মনীষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরুষ খালেকদাদ চৌধুরী। তিনি ‘উত্তর আকাশ’ কিংবা ‘সৃজনী’ এই দুটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে পূর্ব ময়মনসিংহের সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে সম্মৃদ্ধ করেছেন।
রফিক আজাদ, হেলাল হাফিজ, নির্মলেন্দু গুণ, নুরুল হক, শান্তিময় বিশ্বাস, মলয় ভৌমিক, প্রণব চৌধুরী, খালেদ মতিনের মতো সাহিত্যরত্নকে সযত্নে প্রাণিত করেছেন৷ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের আয়োজন করে ছোট্ট মফস্বল শহরের রত্ন ও ঐশ্বর্যকে জাতীয় ভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।
সিদ্দিক প্রেসের ছোট্ট একটা ঘরে তাঁকে কেন্দ্র করেই সাহিত্যের আড্ডা জমতো। সে আড্ডার মধ্যমণি হয়ে তিনি সাহিত্যচর্চা, রাজনীতি ও সময়ের পরিচর্যা করেছেন। এই সহজ সরল, নিরহংকার মানুষটিই ষাট-সত্তর-আশির দশকে এই মহকুমা শহরটিকে আলোকিত করেছিলেন।
তিনি ‘বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমাজে’র সসহকারী সম্পাদক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। আবুল মনসুর আহমদ সম্পাদিত ‘দৈনিক কৃষক’ মামা ছদ্মনামে শিশু কিশোর বিভাগ পরিচালনা করতেন। ‘নবযুগের কিশোর বিভাগে আগুনের ফুলকি পাতাটি ‘আতসবাজ’ ছদ্মনামে পরিচালনা করতেন। কবি নজরুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে যাবার পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপন্ন অভিঘাতে নেত্রকোনায় ফিরে আসেন। ১৯৪৪ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সরকারের প্রচার বিভাগে চাকুরী গ্রহণ করে ১৯৬২ সালে অবসরে যান।
একাধারে গল্পকার, কথা সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য -সংগঠক মরহুম খালেকদাদ চৌধুরী ১৯০৭ সনের ২ ফেব্রুয়ারী নেত্রকোনা জেলার অন্তর্গত মদন থানার চাঁনগাও গ্রামে মাতুলালয়ে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৮৫ সালের ১৬ অক্টোবর তিনি লোকান্তরিত হন।
তাঁর পৈতৃক নিবাস পার্শ্ববর্তী আটপাড়া উপজেলার সোনাজোড় গ্রামে। তাঁর প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়েছিলো ১৯২৩ সালে ‘বিকাশ’ নামের কলকাতার একটি পত্রিকায়।
তিনি ১৯৩২ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত সওগাত, মোহাম্মদী, হানাফি, প্রদীপ, মোয়াজ্জিন, হিন্দু শীর্ষমহল, নব্যবাংলা, শান্তিসহ বেশ কিছু পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। শতাব্দীর দুই দিগন্ত আত্মজীবনীসহ তিনি অসংখ্য গল্প ও বই রচনা করেছেন।
সাহিত্য ছাড়াও তিনি বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ও দর্শনকে ধারণ করে নেত্রকোনায় আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন উত্তরাঞ্চলের বিখ্যাত মহিষখোলা শরণার্থী ক্যাম্পের অন্যতম পরিচালক। এই বিচিত্র কর্মভারে থেমে যায়নি তাঁর কলম।
তিনি মাটির ঐতিহ্য ও ইতিহাস কেন্দ্রিক মৌলিক কথাসাহিত্য লিখেছেন। তাঁর উপন্যাসের ভাষা ও বিবরণে প্রত্যক্ষভাবে উঠে এসেছে পূর্ব ময়মনসিংহের জনজীবন।