স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজের মাধ্যমে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভারতের মেঘালয় দিয়ে নেমে আসা পাহাড়ী নদ মহাদেও থেকে চলছে অবাধে পাথর ও বালু উত্তোলন। সাধারণ মানুষের চোখে ধুলো দিতেই নামে মাত্র চলে মোবাইল কোর্ট অভিযান। পাথর বালু বহনকারী লড়ি চলে বিভিন্ন স্থানে চাঁদা দিয়ে। ফলে বহাল অবৈধ কর্মযজ্ঞে ভাঙ্গছে নদী তীরবর্তী বাড়িঘর।
বসতভিটা হারাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টিসহ স্থানীয় বাঙ্গালিরা। বাঁধা দিলে স্থানীয়দের উপর নেমে আসে প্রাণনাশের হুমকিসহ নানা অত্যাচার। জেলার পাহাড়ী সিমান্ত উপজেলা কলমাকান্দার রংছাতি ইউনিয়নের পাতলাবন এলাকায় দিনে রাতে চলে এমন দস্যুতা। পাহাড়ি ঝর্নাধারার মহাদেও নদের কলমাকান্দার বিশাউতি, হাসানগাও ও ওমরগাও তিনটি স্থানের অংশে ৩৫ দশমিক ১৫ একর জায়গা একটি বালুমহাল শুধুমাত্র বালু উত্তোলনে সরকরীভাবে গত বছর ৪ কোটি টাকায় দিলেও এবছর ৭২ লাখ ১০ হাজার টাকায় মো. চাঁনমিয়া নামের ব্যাক্তিকে ইজারা দেয়া হয়।
কিন্তু এই ইজারা বহির্ভূত এর থেকে আরও তিন থেকে চার কিলোমিটার দূরে গিয়ে ভারত বাংলাদেশের নদের উৎপত্তিস্থল সন্নাসীপাড়া পাতলাবন সীমান্ত এলাকায় গিয়ে করছে অবৈধ উত্তোলন।
এমন নৈরাজ্যের প্রদিবাদ করলে স্থানীয়দের ব্যানার কেড়ে নিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেন স্থানীয় এমপির শ^শুরবাড়ির আত্মীয় (শ্যালক) যুবলীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সুজন বিশ্বাস। তিনি তার পরিচয় তুলে ধরে বলেন, এটির ইজারা আছে উল্লেখ করে বলেন শ্রমিকরা খেয়ে চলে এটা তাদের সহ্য হচ্ছে না।
খোঁজ নিতে গেলেই সাংবাদিকসহ পরিবেশবিদদের গুম করে ফেলার হুমকি দেন গহীন পাহাড়ের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা নানা পরিচয়দানকারী ব্যবসায়ীরা।
এদিকে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের লোকজন প্রতিদিন ঘাট থেকে প্রায় ৫০ হাজারের মতো টাকা উত্তোলন করার অভিযোগসহ প্রতি লড়িতে কলমাকান্দা সদরে শ্রমিক ইউনিয়নের নামে ১০০ টাকা সদর ইউপি অফিসের নামে ৫০ টাকা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নামে ১৫০ টাকা করে তোলার খবর পাওয়া গেছে। একাধিক লড়ি চালক ও ড্রেজার ব্যবসায়ীরা বলেন, ঘাটে ঘাটে নামে বেনামে চাঁদা দিয়ে চলেন তারা।
তবে বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি উপজেলা আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক কাজল দে সরকার বলেন, চাঁদা তারা তুলেন না। শ্রমিক সমিতি বা পরিবহন সমিতির নামে তুলে।
শ্রমিক সমিতির সম্পাদক মো. গোলাম হোসেন স্বাীকার করে বলেন তাদের বিভিন্ন খরচের জন্য এই ১০০ টাকা নেয়া হয়। একটি লড়ি ৫/১০ হাজার টাকা লাভ করে। এইটাত কিছু না।
ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলী বিশ্বাস বলেন মাত্র ৫০ টাকা কোন টাকাই না। এটি বিবিধ কালেকশন। এর ৪০ ভাগ যারা তুলে তারা নিয়ে যায়। বাকি ৬০ ভাগ থেকে সুইপারসহ অন্যদের বেতন দেয়া হয়। আমাদের অন্যান্য খরচ চলে। শতাধিক গাড়ি চলে বলেও তিনি জানান।
স্থানীয়রা বলেন এইভাবে শতশত গাড়ি থেকে পথে পথে চাঁদা তোলার কারণে বন্ধ হচ্ছে না এই অবৈধ কর্মকাণ্ড। কারণ সবাই এখান থেকে অর্থ উপার্জন করছে। ফলে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের কর্মকর্তাদের আদেশও মানছে না কেউ।
তবে কলমাকন্দা ইউএনও আবুল হাশেম জানান, প্রশাসনের কেউ এ কাজ করতেই পারেনা। আমরা প্রায়দিন অভিযান চালাচ্ছি। সোমবার (২৪ অক্টোবর) এসিল্যান্ড ঘটনাস্থলে গিয়েছে জব্দ পাথর নিলাম করতে। তবে অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নেবেন বলেও তিনি জানান। তিনি আরও বলেন এটিকে একদিকে ব্যবস্থা নিচ্ছি অন্যদিকে ভিন্ন পথ নিচ্ছে। তাই স্থায়ীভাবে ইজারা বাতিলের বিষয়েও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।