নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল মোহনগঞ্জের ডিঙ্গাপোতা একটি অবহেলিত হাওর জনপদ। যেখানে নেই কোন স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ সুবিধা। একটি কমিউনিটি ক্লিনিকও পর্যন্ত নেই এই হাওরের মাঝখানে মল্লিকপুর গ্রামটিতে।
এখানকার মানুষদের বেশিরভাগই নিন্ম আয়ের এবং কৃষক শ্রেনির। নেই সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। যে কারনে চিকিৎসা নিতে যেতে হয় মোহনগঞ্জ অথবা নেত্রকোনা জেলা সদর হাসপাতালে। এছাড়া চক্ষু চিকিৎিসা নিতে যেতে হয় ময়মনসিংহ বিএনএসবি সহ বিভিন্ন চক্ষু হাসপাতালে। আর এ জন্যই এই প্রথম এই গ্রামে আয়োজন করা হয়েছে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির ক্যাম্প।
বৃহস্পতিবার সকালে মোহনগঞ্জ উপজেলার মাঘান সিয়াধার ইউনিয়নের গলগলি মল্লিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গ্রামের দরিদ্র মানুষদের বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। গ্রামটির প্রয়াত সমাজ সেবক অনিল তালুকদার স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে ময়মনসিংহ কে জামান বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের ১১ জনের একটি মেডিকেল টিম এই সেবা প্রদান করে। এতে মল্লিকপুর সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের ৫ শতাধিক নারী পুরুষকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে।
তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চশমাও প্রদান করা হয় বিনামুল্যে। এছাড়াও যাদের চোখের ছানি অপরারেশন করা হবে তাদেরকে পরীক্ষা করে ছানি অপারেশনের জন্য হাসপাতালের নিজ খরচে ময়মনসিংহ নিয়ে অপারশেন করে আবার পৌঁছে দেয়া হবে। এদিকে দৌঁড়গোড়ায় চিকিৎসাসেবা চলে আসায় সকাল থেকেই বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষরা এসে ভিড় জমান। তারা ভোটারদের মতোই লাইন ধরে ধরে রেজিস্ট্রেশন করে সিরিয়াল নম্বর নিয়ে ডাক্তারের কাছে সেবা নেন।
এদিকে প্রত্যন্ত এসকল গ্রাম মল্লিকপুর, নারাইজ, শেওরাতলীসহ বেশ কটি গ্রামের মানুষ সেবা নিয়ে অত্যন্ত খুশি। তারা জানান নানা কারণে চোখের অসুখে ভুগলেও সেবা নিতে যেতে পারেন না। অর্থ সংকটের পাশাপাশি রয়েছে যাতায়াত সমস্যা।
পূর্বপাড়ার সুধাংশু সরকার বলেন, বেশির ভাগই পয়সার জন্য যেতে পারে না। এখানের মানুষ সব কৃষির উপর নির্ভরশীল। তারা অসুখ বিসুখ হলে গ্রামেই থেকে ধুকে ধুকে মরে। যাদের সুযোগ সুবিধা রয়েছে তারা এমন উদ্যোগ নিলে সাধারণ মানুষের উপকার হয়।
এ ব্যাপারে উদ্যোক্তা জলি তালুকদার ও প্রবাসী কাকলি তালুকদার জানান, এই গ্রামে সড়ক নেই, হাসপাতাল নেই। কোন ধরনের নাগরিক সুযোগ সুবিধা নেই। এই এলাকার মানুষের চিকিৎসা নিতে যেতে যেতেই অনেকের বড় ধরনের বিপদ হয়ে পড়ে। এমনকি সেবা নিতে গিয়ে অনেকের যাওয়ার পথেই প্রাণ চলে যায়। এই কারণেই আমাদের বাবার নামে এই সেবা চালু করেছি। প্রতি বছর এটি বলবৎ থাকবে। আমাদের বাবাও মানুষের জন্যই সব সময় কাজ করেতন।