দেশের অন্যান্য জেলা থেকে শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা জেলা নেত্রকোনা। প্রাথমিকে গুরুত্বপূর্ন প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদসহ অন্যান্য পদেও শূন্যসহ নানা সঙ্কটে চলছে জেলার কার্যক্রম। জেলার ৪৮৮ টি স্কুলে নেই প্রধান শিক্ষক। এছাড়াও সহকারি শিক্ষক মনিটরিং আফিসার সহ জনবল সঙ্কটে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। বাড়তি দায়িত্ব পালনে হিমশিম খাচ্ছেন দায়িত্ব প্রাপ্তরা। বেঘাত ঘটছে শিক্ষা বিস্তারে। তারপরও শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে কাজ করছেন সবাই বললেন সংশ্লিষ্টরা। অচিরেই সমস্যা নিরসনের আশ^াস জেলা কর্মকর্তার।
নেত্রকোনা জেলাটি পশ্চাতপদ জেলা হওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বিরাজ করছে নাজুক অবস্থা। জেলার ৮৬ টি ইউনিয়নের মধ্যে দুর্গম এলাকাগুলোর অবস্থা বেশি নাজুক। জেলার ১৩১৩টি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪৮৮টিতেই প্রধান শিক্ষকের পদই শূন্য রয়েছে। ফলে প্রধান শিক্ষকের সকল কাজ করতে হয় সহকারি শিক্ষক বা ভারপ্রাপ্তদের। যে কারনে পাঠদানের সঙ্কটে পড়েন শিক্ষকরা। বাড়তি চাপে হিমশিম খেতে হয় সকলের। সহকারী শিক্ষকও নেই ২৩০টিতে। এছাড়াও রয়েছে মনিটরিংয়ের জন্য সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার ৪৬ পদেরে মধ্যে ২২ টিই শূন্য পদ। একজনকে কয়েকজনের দায়িত্ব পালন করতে হয়। ফলে কোন রকম কাজ হয়।
১০ উপজেলার ১০ জন হিসাব সহকারীর মাঝে রয়েছে মাত্র ২ জন। অফিস সহায়ক ১০ জনের মধ্যে ৭ টি শূন্য পদ। উচ্চমান সহকারী পদে ১০ জনের মধ্যে ৬ টি পদই শূন্য। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ১৮ টি পদের মধ্যে ৫ টি শূন্য। এমনি করে জনবল সঙ্কটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।
এদিকে জেলার উপজেলাগুলোর ইউনিয়ন পর্যায়ে সৃষ্টপদ শূন্য থাকলেও পৌর এলাকায় দেখা গেছে ৫ থেকে ৬ জনের স্থলে ৯ জন ১৩ জন করে কিছু কিছু প্রভাবশালী এলাকায়। চাকরি করার সুবাদে লবিংসহ নানা ধরনের তদবির করে গ্রাম থেকে শিক্ষকরা চলে আসেন শহরের নিজ বাড়ি ঘরের আশপাশে। তাদের মধ্যে নারীদের সংখ্যই বেশি বলে জানা গেছে স্থানীয় ও বিভিন্ন সূত্রে। জেলার সদর উপজেলার ২০১ টির মধ্যে প্রধানের পদ শূন্য ৪৩ টি। তারমধ্যে মদনপুর ইউনিয়নে ১৮ টির মধ্যে ১১ টিই শূন্য। কে গাতীতে ১৫ টির মধ্যে ৯ টিই শূন্য।
সুশীল সমাজের নেতারা বলছেন সকলেই বদলি হয়ে আরাম করতে শহরে পাড়ি জমায়। তা না হলে গ্রামগুলোতে প্রধান শিক্ষক সঙ্কট থাকলেও সহকারিদের শূন্যতা না থাকলে বা এ দুজন বেশি থাকলে পাঠদানে সমস্যা হওয়ার কথা ছিলো না। তারা সমন্বয় করে মিলিয়ে নিতে পারে। কিন্তু প্রাথমিকের শিক্ষকদের পৌরসভার ২৫ টি স্কুলের বেশিরভাগেই রয়েছে অতিরিক্ত শিক্ষক।
যেমন শহরের মালনি এলাকায় চন্দ্রনাথ স্কুলে ১৩ জন শিক্ষক। ৬ থেকে ৭ জনের স্থলে এতো শিক্ষক অতিরিক্ত কেন কেউ এর জবাব দিতে পারেননি। শহরের হোসেনপুর স্কুলে ৯ জন শিক্ষক। উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদালয়েও একই অবস্থা। শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষক বেশি।
অথচ শহরে কিন্ডার গার্টেন বেশি থাকায় শহরের প্রতিটি প্রাথমিকে শিক্ষার্থী একেবারেই কম। যারা রয়েছে তারা নিন্ম পরিবারের সন্তানই বেশির ভাগ। এদিকে গ্রামের স্কুলগুলোতে যে কজন শিক্ষক প্রয়েজন সেই পরিমাণ শিক্ষক নেই। কিন্তু শহরের সরকারী স্কুলগুলোর তুলনায় গ্রামের স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি শিক্ষকের সংখ্যা কম। যে কারনে গ্রামের শিক্ষার্থীদের আশানুরূপ শিক্ষা হচ্ছে না এলাকাবাসীর অভিযোগ।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরাও অফিসিয়াল দায়িত্ব পালনে পাঠদানে একসাথে চাপে রয়েছেন। এদিকে মনিটরিং কর্মকর্তা সংকটেও কিছুটা বিঘিœত হচ্ছে স্বীকার করে কর্মকর্তা শিক্ষক নেতারা বলছেন তারপরও তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
সুজনের সভাপতি শ্যামলেন্দু পাল জানান, শিক্ষকরা চাকরির পরপরই চেষ্টা করে কিভাবে শহরে চলে আসবে। গ্রামে চাকরি হলেও নানা লবিং করে তাদের পছন্দসই জায়গায় চলে আসাটা একটা সমস্যা। ফলে ওই এলাকায় শিক্ষকের ঘাটতি পরে। চাইলেই সেখানে কাউকে দেয়া যায়না। তাছাড়া শিক্ষকরা আজকাল রাজনীতি বা নানা কিছুর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়া আরেকটি কারন। শিক্ষক সমিতির মধ্যেও গ্রæপিং। ফলে শিক্ষা বিস্তারের জন্য কাজ করে না কেউ। সবাই নিজেদের সুবিধা নিয়ে আছে। এছাড়া তো প্রধান শিক্ষকের অনেকগুলো পদ শূন্য। আমরা চাই শিক্ষকদের এ সমস্থ সমস্যা গুলো দ্রæত সমাধান হোক।
সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভপতি শাহনাজ পারভীন বলেন, শিক্ষক সঙ্কট তো রয়েছেই। যারা মনিটরিং করবে সেই সমস্থ কর্মকর্তাও নেই। জেলার সদরের ৭ টি পোস্টের মধ্যে আমি ৩ থেকে চার জনের বেশি দেখিনি গত ১২ বছরেও। বর্তমানে তিনজন সাত জনের কাজ করছেন।
সরকারী উপজলা শিক্ষা কর্মকর্তা জিয়াউল হক জানান, কিছুটা সমস্যা হলেও আমরা প্রতিনিয়িত ক্লাস্টার ডিউটিগুলো সম্পন্ন করার চেষ্টা করি। সাতজনের জায়গায় তিনজনে করলে কিছুটা ঘাটতি তো থাকবেই। তারপরও আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সম্পাদক আবু জাহিদ দুলদুলের কাছে জানতে চেষ্টা করা হলে কি কি সমস্যা? কেন শিক্ষকরা বদলির পায়তারা করেন শহরে এসব বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তিনি প্রথমবার ফোন ধরে পরে আর ধরেননি।
এদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান খান সঙ্কটের বিষয়গুলো স্বীকার করে জানান, এই সঙ্কট থাকবে না। তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সামনের নিয়োগে হয়তো অনেকগুলো পূরণ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন প্রতিনিয়ত অবসরে যাওয়াও শূন্যতার একটি কারণ। তারপরও তারা শুন্যতার সঙ্কটকে পাশ কাটিয়ে এবার বছরের প্রথমেই বই দিয়েছেন শিক্ষার্থীদের হাতে। অন্যান্য সমস্যাগুলোও কাটিয়ে উঠবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।