আবিদ মো: আজরফ, নেত্রকোনা:
এবার ঈদের লম্বা ছুটিতে নেত্রকোনার সীমান্ত উপজেলা দূর্গাপুরে সোমেশ^রী নদী ও পাহাড়ের সৌন্দর্য্য উপভোগ করেত রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক ঘুরতে এসেছেন এখানে। যদিও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় বছরের শুষ্ক মৌসুম জুড়েই পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকে পাহাড় ও নদীর অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি নেত্রকোনার দুর্গাপুর বিরিশিরি এলাকা। সীমান্ত উপজেলাটি হতে পারে দেশে অন্যতম পর্যটনীয় এলাকা।
এবার ঈদে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক দূর্গাপুরে এসেছেন বলে দাবি স্থাণীয়দের। এতে সীমান্ত ঘেসা গ্রামগুলোতে গড়ে উঠা হোটেল রেস্টুরেন্টে অন্তত অর্ধ কোটি টাকার ব্যবসা বানিজ্য হয়েছে বলে জানান ব্যাবসায়ীরা। এমতাবস্থায় পর্যটকদের সাবিধায় সরকারি পৃষ্ঠ পোষকতায় পর্যটন কেন্দ্র গুলোর পাশেই পর্যাপ্ত বিশ্রামাগার হোটেল মোটেল গড়ে উঠলেই এ খাতে ব্যাপক উন্নতি সম্ভব বলে মনে করছেন ঘুরতে পর্যটকরা।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা নেত্রকোনার দুর্গাপুর। এখানে রয়েছে পাহাড় নদীর গভীর মিতালি। মুগ্ধ হবার মতো পাহাড়ী কন্যা সোমেশ্বরীর স্বচ্ছ পানি। উপজেলার কুল্লাগড়া পুরো ইউনিয়নটি জুড়ে রয়েছে উপভোগ করার মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নানা স্থাপনা। প্রকৃতির এই মুগ্ধকর রূপ যা ভ্রমণ পিপাসুদের প্রতিনিয়তই হাতছানি দিয়ে ডাকে। বিজয়পুর সীমান্ত সড়কের পাশেই চোখে পড়বে ক্যাথলিক গীর্জা রানিখং মিশন সহ নানা স্থাপনা।
এছাড়াও কুল্লাগড়া ইউনিয়নটির প্রায় সাত কিলোমিটার জুড়েই রয়েছে খনিজ সম্পদ চিনামাটির পাহাড়। যা ইতোমধ্যে জিআই পণ্য হিসেবে ভৌগলিক সীকৃতী পেয়েছে। খননকৃত পাহাড়ের ভেতরেই রয়েছে নীল জলরাশি। দেখে যেনো প্রাণ জুড়িয়ে আসে। এসকল সৌন্দর্য উপভোগ করতে এবছর ঈদের ছুটিতে প্রতিটি দর্শণীয় স্থানই অসংখ্য দর্শনার্থীদের পদচারনায় মূখর হয়ে উঠে। ঈদের দিন বিকেল থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাস, মোটরসাইকেল মাইক্রোবাসে চড়ে পর্যটকরা অনায়াসেই চলে আসছেন এখানে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কর্ম জীবনের ব্যস্ততার ফাকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে হাড়িয়ে যাচ্ছেন পর্যটকরা। চার পাশের খোলা মাঠ আর উচু উচু পাহাড় মন কাড়ছে সকলের। কখনো বা চিনা মাটি পাহাড়ের চুড়ায় কখনো সোমেশ^রীর মাঝ নদীতে ছোট ছোট নৌকায় চরে আনন্দ করে দেখা যায় দর্শনার্থীদের। কেউ কেউ আবার নদী স্বচ্ছ পানি দেখে গা ভাসাতে নেমে পড়েছেন সাঁতার কাটতে। এযেনো ক্ষণিকের জন্য হলেও আবারো ছোট বেলায় হাড়িয়ে যাওয়ার মত একটি মুহুর্ত।
এদিকে পর্যটকদের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখে ছিলো বিরিশিরি কালাচারাল একাডেমির অথিতিশালা, ওয়াইএমসি, জিবিসি, সোমেশ্বরী লাক্সারিয়াস, বিরিশিরি ভিলেজ এগ্রো রিসোর্টসহ বিভিন্ন হোটেল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে আগাম বুকিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে আসছেন তারা। ওয়াইএমসির ম্যানেজার এন্থনি মারেক, বিরিশিরি ভিলেজ এগ্রো রিসোর্টের ম্যানেজার আব্দুল হান্নান জানান, বছরের শুষ্ক মৌশুম জুরেই পর্যটকদের আনাগোনা রয়েছে। তবে এবার ঈদে রেকর্ড পরিমাণ পর্যটক এসেছেন দূর্গপুরে। ঈদের ছুটি শেষ হলেও প্রতিটি হোটেল, রিসোর্ট এখনো পর্যন্ত দর্শনার্থীদের দখলেই রয়েছে।
দূর্গাপুরে ঘুরতে আসা একাধিক দর্শনার্থী জানান, পর্যটন কেন্দ্র গুলো আশে পাশে থাকা খাওয়ায় তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘুরতে এসে কিছুটা বিড়ম্বানায় পড়তে হয় ভ্রমণ পিপাসুদের। সেইসাথে পাহাড়ের বিস্তীর্ন এলাকা জুরে কোথাও নেই বিশ্রামাগার। এতে রোদ বৃষ্টিতে পর্যটকদের আশ্রয় নেয়ার তেম কোন ব্যাবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে পর্যটকদের। এ ছাড়াও সোমেশ্বরী নদী পাড় হয়েই যেতে হয় এ সকল সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে। কিন্তু নদী পাড় হওয়া যেনো এক যুদ্ধের ময়দান হয়ে দাঁড়িয়েছে
পর্যটকদের সামনে। বর্ষা মৌশুমে ভরসা নৌকা আর এখন বাঁশ, কাঠ দিয়ে তৈলী অস্থায়ী সেতু। যদিও এই সেতু পাড়ি দিতেই জনপ্রতি গুনতে ৫ থেকে ১০ টাকা। এবার ঈদ মৌশুমে গুনতে হয়েছে ১০/২০ টাকা। মোটরসাইকেল ৩০ টাকা ও প্রাভেটকার ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। যা অনেকটাই সাধারন মানুষের কাছে কষ্টস্বাধ্য। এমতাবস্থায় দূর্গাপুর থেকে শিবগঞ্জ পর্যন্ত একটি সেতু অতিব প্রয়োজন হয়ে দাড়িয়েছে।
কিশোরগঞ্জ থেকে আগত পর্যটক শাহিন আলম জানান, জায়গাটি অনেক সুন্দর তিনি এখানে বেশ কয়েকবার এসেছেন। তবে এবার পরিবার পরিজন নিয়ে এসেছেন। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করে মুগ্ধ সবাই। কিন্তু পর্যটন কেন্দ্র গুলোর আশে পাশে থাকা খাওয়া ও পর্যটকদের বিশ্রাগার না থাকায় কিছুটা বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে তাদের। যদিও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি পর্যটন সেবা কেন্দ্রর পাশাপাশি পুলিশ ভক্স ও জেলা পরিষদের অর্থায়নে বিজয়পুরে একটি বিশ্রমাগার নির্মান করা হয়েছে। তবে এগুলো উদ্বোধন হলেও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হয়নি এখানো।
সাদা মাটির পাহাড় ঘেষা গ্রামগুলো একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, এবার পাহাড়ে রেকর্ড সংখ্যক দর্শনার্থী এসেছেন। এতে লাভবান হয়েছেন তারা। দেশের অন্য সব পর্যটন এলাকা থেকে দূর্গাপুর কোনা অংশে কম নয়। যদি এলাকাটিকে পর্যটন এলাকা হিসাবে ঘোষণা করা তাহলে এখানকার অর্থনৈতিক আমুল পরিবর্তন ঘটবে বলে ধারনা করছেন তারা।
এদিকে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় সাদা পোষাকে সর্বক্ষনি পুলিশি নজরদারি রয়েছে বলে জানিয়েছেন, জেলা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সি। জেলা প্রশাসক কাজি মোঃ আব্দুর রহমান জানান, এক পাশে পাহাড় অন্য পাশে নদী এমন সৌন্দর্য্য দুর্গাপুর ছাড়া দেশের আর কোথায় নেই। এরইমধ্যে পর্যটকদের সেবায়া নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে হোটেল মোটেলসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হবে। দূর্গাপুরকে পর্যটন এলাকা হিসাবে গড়ে তোলতে দর্শনীয় স্থানগুলোতে পর্যাপ্ত বিশ্রামাগার গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিবেন কতৃপক্ষ। এমনটাই প্রত্যাশা পর্যটকসহ স্থানীয়দের।